যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সেমিকন্ডাক্টরের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নীরবে প্রত্যাহার করেছে চীন-এমন তথ্য জানাচ্ছেন শেনজেনভিত্তিক তিনটি আমদানি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। যদিও চীনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি, তবে সংশ্লিষ্ট মহল এই সিদ্ধান্তকে চীনের প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পখাতকে রক্ষার কৌশল বলেই দেখছেন।
সিএনএনের সঙ্গে কথা বলার সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাড়টি মূলত মাইক্রোচিপ বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ওপর প্রযোজ্য, যা বিশ্বব্যাপী আধুনিক প্রযুক্তির প্রাণভোমরা হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, চলমান যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। গত এপ্রিল মাসে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত সমস্ত পণ্যের ওপর পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপায়।
তবে প্রযুক্তিখাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও নিজস্ব উৎপাদন সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে বেইজিং। এক আমদানিকারক কর্মকর্তার মতে, "এটা শুল্ক নয়, বাস্তবতা-চীনের ইলেকট্রনিক ও বেসামরিক বিমান খাতের জন্য নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রাংশ অপরিহার্য, যেগুলো বিকল্প উৎসে মিলছে না।"
জানা গেছে, সেমিকন্ডাক্টর ছাড়াও বিমানের ইঞ্জিন, ল্যান্ডিং গিয়ারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ওপরও এই শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ইলেকট্রনিক পণ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি। এই শিল্পে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চীন গত কয়েক বছর ধরে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও নেদারল্যান্ডসের প্রযুক্তির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
চীনা কাস্টমস বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ১১.৭ বিলিয়ন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর আমদানি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত চীনের বাণিজ্য কৌশলে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন প্রতিক্রিয়া জানা না গেলেও প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের এমন পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।