শনিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৫

স্বপ্ন ও স্বপ্ন পূরণ

  • শিরীন সুলতানা সম্পা
  • ২০২৫-০৪-০৮ ২০:০৬:০০

দুইদিনের দুনিয়া, সে দুনিয়া নিয়ে আমাদের ভাবনা- চিন্তা, পরিকল্পনার কোন শেষ নাই। আমরা সবাই জানি, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে বেড়ানোর সময় ফুরিয়ে এলেই আমাদের চলে যেতে হবে। এক সেকেন্ডেই ভেস্তে যাবে জীবনকে নিয়ে সব  মহাপরিকল্পনা। চলে যাবো চিরস্থায়ী সেই ঠিকানায়। কেউ জানিনা, সেই অচিন ভুবন কেমন হবে! কখন, কিভাবে, কার ডাক আসবে!
তবু আমরা এই ছোট্ট জীবন নিয়ে কতকিছু ভাবি। এটা করবো, সেটা করবো। আমিও জীবনের একেক সময় একেক ভাবনা ভেবেছি। ভেবেছি একটা, হয়ে গেছে আরেকটা। কখনো ভেবেছি এই করবো, সেই করবো। ইচ্ছা, চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি। তবু করা হয়নি, করতে পারিনি। হয়ত ভাগ্যে ছিলনা, তাই। আমার একান্ত নিজেকে নিয়ে ভাবনার সাথে বাস্তবতার মিল খুব কম হয়েছে। কিন্তু সেটা ভেবে আমার মনে বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই।
কারণ, আমি কিংবা আমরা সবাই জানি- সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী ঐ একজনই। আল্লাহ যা কিছু করেন, আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। যা আমার পাওয়ার ছিলনা বলেই আমি পাইনি। যা আমার কখনো হওয়ার ছিলনা বলেই আমার হয়নি।  আমি কখনোই মুক্ত বিহঙ্গের মত জীবন চাইনি। আমার সবসময়ই জীবনকে নিয়ে অনেক পিছুটান ছিল। আমি শুধু একটা সাজানো-গোছানো জীবন চেয়েছি। জীবনের এই বেলায় এসে আমি স্বস্তির সাথে বলতে পারি, আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সেই জীবনের দেখা আমি পেয়েছি। হয়ত আমি জীবনে যখন যা যেভাবে ভেবেছি, সব ঠিকঠাক তাই পেয়ে গেলে এই জীবনের দেখা আমি পেতাম না। আমার জন্য যা বাস্তব, অনেকের জীবনে তা এখনো স্বপ্ন। 
তবু আমি এখনো স্বপ্ন দেখি। জীবনের না পাওয়া স্বপ্নগুলো অন্যভাবে পূরণের ইচ্ছে জাগে মনে। একটা আত্মপরিচয় খুঁজে বেড়াই, সবসময়ই নিজের কিছু করতে ইচ্ছে করে। প্রয়োজন আছে কি নেই, তা হচ্ছে গৌণ ব্যাপার। চারপাশে কত নারী কতকিছু করছে। প্রচারমাধ্যমে এসব দেখে মনে বড় সাহস পাই। আমি কেন পারবো না? তাইতো চেষ্টা করি বারংবার নিজের অপূর্ণ স্বপ্নকে ছোঁয়ার। এই বয়সে এসেও আমার এত উদ্দীপনা দেখে আশেপাশের জুনিয়ররা খুব অবাক হয়। আমার দ্বারাই সম্ভব, ওরা পারবেনা। আমিই পারবো কিছু করতে, আর কেউ না পারুক। এইরকম অনেক উৎসাহমূলক কথা শুনি। অনেকেই আমাকে খুব শক্ত মনের মানুষ ভাবে, এমনকি আমি নিজেকেও সবসময় তাই প্রমাণ করতে চাই। আমাকে কষ্ট দেওয়া এত সোজা না। সত্যিটা আজ বলি, আমি নারকেলের রুপ ধারণ করে আছি!
আজ আমার স্বপ্নের কথাটাও বলে ফেলি, যা দিন- রাত এখন শুধু আমি ভাবি। আমার নিজের একটা দোকান হবে। অনেক সুন্দর করে দোকানটা সাজানো হবে। আমার মেয়ের নিজের হাতে তৈরী জিনিস দিয়ে সাজানো দোকান। দোকানে হরেক রকমের খাবার সাজানো থাকবে সুন্দর কাঁচের শোকেসে। সব আমার হাতের তৈরি, সবাই খেয়ে অনেক প্রশংসা করবে। আস্তে আস্তে আমার দোকানের খাবারের সুনাম অনেকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে। এমন কি হতে পারেনা? কত হয়েছে, আমার বেলায় হবেনা কেন?
ওহো! আমার স্বপ্নের দোকানের নামও আমি ঠিক করে ফেলেছি অনেক আগে, ' রসনা বিলাস '। ছোট বেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলাম বেগম রোকেয়ার 'রসনা বিলাস'। মনে আছে? মাইজদীতে টাউন হলের মোড়ে আমার প্রিয় একটা খাবারের দোকান ছিল 'রসনা'। জানিনা, এখনো আছে কিনা!
ব্যস! স্বপ্নের কথা বলা হয়ে গেলো। এখন স্বপ্ন পূরণ না হলেও কোনো ক্ষতি নেই। জীবনকে নিয়ে আর কোনো পরিকল্পনা নয়। জীবনকে ছেড়ে দিলাম আজ থেকে পাগলা ঘোড়ার মত। জীবন আমায় যেদিকে নিয়ে যাবে যাক। যখন ঘোড়ার সময় থেমে যাবার, তখন ঠিক থেমে যাবে!!

 


এ জাতীয় আরো খবর