বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগের স্বপ্নে সাময়িক ব্রেক কষল নয়াদিল্লি। প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে গৃহীত একাধিক রেল প্রকল্প স্থগিত করেছে ভারত, আর এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক নিরাপত্তার ঝুঁকি। তবে, বিশ্লেষকেরা বলছেন—এই স্থগিতাদেশের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে এক গভীর ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ।
রোববার ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দু জানায়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ভারতের অর্থায়নে চলমান তিনটি রেল প্রকল্প ও পাঁচটি সম্ভাব্য রুটের সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ আছে নির্মাণসামগ্রী রপ্তানিও। এর ফলে আখাউড়া-আগরতলা, খুলনা-মোংলা, এবং ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর প্রকল্পগুলো পড়েছে বড় ধাক্কার মুখে।
প্রতিবেশী নাকি পারস্পরিক সংশয়?
সরকারি ভাষ্যে "অস্থিরতা" ও "নিরাপত্তা ঝুঁকি"র কথা বলা হলেও, কূটনৈতিক মহলে ফিসফাস চলছে—এই স্থগিতাদেশ কী কেবলই নিরাপত্তাজনিত? নাকি ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির এক প্রকার অসন্তুষ্টির ইঙ্গিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন, নির্বাচন পরবর্তী উত্তেজনা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে সমালোচনা এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধ সব মিলিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এক ধরনের সতর্কতা তৈরি করেছে।
মোংলা প্রকল্প: কৌশলগত স্বপ্নে থেমে যাওয়া ট্রেন
ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিল খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ, যেখানে তারা ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপির বিনিয়োগ করে একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকার পেত। এই প্রকল্প কেবল ব্যবসায়িক নয়, ছিল নৌবন্দর-রেল কনভার্জেন্সের কৌশলগত দৃষ্টান্ত। প্রকল্পটি থেমে যাওয়ায় ভারতের “বন্দর থেকে সীমান্তে” নীতি এক বড় ধাক্কা খেয়েছে।
শুধু বাংলাদেশ নয়,বিকল্প পথে ভারত
নয়াদিল্লি এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশের বিকল্প রুট খুঁজছে। উত্তর প্রদেশ, বিহার, নেপাল ও ভুটান হয়ে সামরিক ও বাণিজ্যিক ডাবল ট্র্যাক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে তারা। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরতা কমাতে কুমেডপুর, গালগালিয়া, বিরাটনগর হয়ে নতুন সংযোগের পরিকল্পনা জোরদার হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বনাম বাস্তব সম্পর্ক
২০২৪ সালে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২.৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশ ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার দক্ষিণ এশিয়ায়। এমন এক সময় এই প্রকল্প স্থগিত হওয়ার ঘটনা শুধু যোগাযোগ নয়, পারস্পরিক আস্থার সংকেতও বয়ে আনছে।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, "যোগাযোগ থেমে গেলে শুধু ট্রেনই নয়, থেমে যায় সম্পর্কের প্রবাহও।"
স্থগিত প্রকল্প না ভূ-রাজনৈতিক বার্তা?
ভারতের এই পদক্ষেপ নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে—
???? এটা কি কেবল নিরাপত্তাজনিত পদক্ষেপ?
???? নাকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতের অস্বস্তির প্রকাশ?
???? এই থেমে যাওয়া কি পারস্পরিক যোগাযোগে দীর্ঘস্থায়ী ছায়া ফেলবে?
উত্তর ভবিষ্যতের গন্তব্যে। তবে এতটুকু পরিষ্কার—এই সিদ্ধান্ত ট্রেনের মতোই একটি দিক নির্দেশ করছে, শুধু গন্তব্যটা এখনও নিশ্চিত নয়।