শনিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৫

শাওয়াল মাসের আমল ও তাৎপর্য

  • সৈয়দ মুফতি উসামা ইসলাম
  • ২০২৫-০৪-০৫ ১৩:২০:৪০

শাওয়াল হলো হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) প্রথম মাস; এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ। 
শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণ : পবিত্র রমাদানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস।  শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে-  উঁচু করা, উন্নতকরণ, উন্নত ভূমি, পূর্ণতা, ফলবতী, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া, প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করা বা দানে হস্ত প্রসারিত করা,
আরেক অর্থ বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ-উল্লাসের জন্য ভ্রমণে বের হয় এজন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয়। (গিয়াসুল্লুগাত-২৮৭)
শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে এসব আমলের ফজীলতও অনেক বেশী।
এ মাসের গুরত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোজা’। রমজানের ফরয রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব।
শাওয়াল মাসের এ ছয়টি রোজা মূলত সুন্নত। যেহেতু রাসুল (সা.) নিজে তা আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়। কারণ, এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, অতিরিক্ত তথা নফল।
রাসূলুল্লাহ সাঃ হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেন, “যারা মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখবে, অতঃপর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে। (মুসলিম শরীফ :১ম.খ- ৩৬৯ পৃ:)
এই হাদিসে বলা হয়েছে যে, রমযানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে। এই সওয়াব এভাবে যে, কুরআন কারীমের সূরায়ে আন-আমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, “যে লোক একটি নেক কর্ম আঞ্জাম দিবে সে লোক দশগুণ বেশী সওয়াব পাবে। সে হিসেবে রমযানের ত্রিশ রোজায় তিনশত রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ষাট রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬ টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
শাওয়ালের রোজা রাখার সময় : শাওয়ালের রোজা রাখার উত্তম সময় হলো ঈদের পরের ৬ দিন। কারণ তাতেই রয়েছে নেক আমলের প্রতি ধাবিত হওয়ার প্রমাণ।
শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখায় ফজিলতপূর্ণ। তবে লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা চলে। এবং শাওয়াল মাস চলে গেলে তা কাযা করা জরুরি নয়।
রমজানের কোনো ফরয রোজা ভাঙতি হলে প্রথমে সেই ফরয রোজাই রাখতে হবে। পরে শাওয়ালের ছয়টি রোজা করতে হবে। রোজা কাযা করার যথাযর্থ ও অনুমোদিত ওযর যার রয়েছে, তাকে অবশ্যই কাযা রোজা করতে হবে আগে।
ইসলামের ইতিহাসের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে। যেমন শাওয়াল মাসে হজরত লুত (আ.) এর কওম ধ্বংস হয়েছিল, হজরত নূহ (আ.) এর কওম পানিতে ডুবেছিল, হজরত হুদ (আ.) এর কওম বায়ুতে ধ্বংস হয়েছিল, হজরত সালেহ (আ.) এর কওমের শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল। অথচ হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতের জন্য শাওয়াল মাসকে নেয়ামতের মাস হিসেবে দান করা হয়েছে।
শাওয়াল মাসের পরিপূর্ণ বরকত ও ফায়েজ লাভ করার জন্য আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন।


এ জাতীয় আরো খবর