ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধিঃ নগরীর মীরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলের বন্ধকৃত এ্যাযাক্স জুট মিল পরিদর্শনে জেলা প্রশাসকের গঠিত প্রতিনিধি দল। এ্যাযাক্রা জুট মিলের মালিক কাওছার জামান বাবলা মিলটি বিক্রয় করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধে মিলটি বিক্রয় অথবা চালুর জন্য খুলনা জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের গঠিত কমিটির সদস্যরা গতকাল ৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে মিলটি সরেজমিন পরিদর্শন আসেন।
একাধিক সুত্রে জানাগেছে, নগরীর মীরেরডাঙ্গা শিল্পাঞ্চলের বন্ধকৃত এ্যাযাক্রা জুট মিল ২০১৫ সালে মালিক পক্ষ মিলটি লোকসান দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়। পরবর্তিতে মিলটির শ্রমিক কর্মচারীরা মিল চালু ও তাদের পাওনা পরিশোধে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। ২০২০ সালে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেড এর স্বত্ত¡াধিকারী আব্দুল মান্নানের কাছে মিলটি ২শ কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রয়ের জন্য চুক্তিবন্ধ হয় মালিক। সুত্র বলছে চুক্তিতে বলা হয় ৬মাসের মধ্যে মিলের ব্যাংক লোন, শ্রমিকদের পাওনা টাকা এবং মালিক পক্ষকে উল্লেখিত টাকা দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালে নিউ বসুন্ধরা রিয়েলস্টেড এর স্বত্ত¡াধিকারী আব্দুল মান্নান বিশাল দোয়ার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মিলটির বুঝে নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি শ্রমিক-কর্মচারী এবং মালিক পক্ষকে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রদান করে বলে ঐ সুত্র জানিয়েছেন। পরবর্তিতে মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের তাদের পাওনা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মিলটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়লে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে মিলটি চালু এবং মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে খুলনা জেলা প্রশাসক ও শ্রমও পরিচালক মালিক পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়। পরবর্তিতে এ্যাযাক্রা জুট মিল ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি এ্যাযাক্রা জুট মিলের মালিক কাওছার জামান বাবলা শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা টাকা পরিশোধে মিলটি বিক্রির জন্য দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলিফ রেজাকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে শিল্প পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, কেএমপির উর্ধতন কর্মকর্তা, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক দপ্তর, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে অন্তরভুক্ত করা হয়। জেলা প্রশাসকের গঠিত কমিটি গতকাল ৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে মিলটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। সকাল ১০টায় ফুলবাড়ীগেট আইআরআই কার্যালয়ে গঠিত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলিফ রেজা, খুলনা শ্রমও পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমানসহ কমিটির সদস্যগণ, মিলটির মালিক কাওছার জামান বাবলা, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল এস এম মনিরুজ্জামান মুকুলের সমন্বয়ে যৌথ বৈঠক শেষে বেলা ১১ টায় মিলটি পরিদর্শনে করে। এ সময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্জ মোঃ সাহাবু্িদ্দন আহমেদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মিলের মালিক কাওছার জামান বাবলা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫ সালের মে মাসে আর্থিক সংকটের কারণে আমি মিলটি বন্ধ করে দেই। পরবর্তিতে আমার অনুমোতি ছাড়াই অবৈধভাবে সার রেখে মিলটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে এবং মিলটি চালু করতে আমি প্রস্তুত কিন্তু আগে আমার মিলটি দখলমুক্ত করে আমাকে বুঝিযে দিতে হবে। পরিদর্শন কালে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, মিলটি যাতে চালু করা যায় অথবা মিলের শ্রমিকদের পাওনা সকল টাকা পরিশোধের জন্য আমি চেষ্টা করছি। আমার নির্বাচনকালীন সময়ের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী মিলটি চালু অথবা শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধের অঙ্গিকারের অংশ হিসাবে আজ জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি দল মিলটি পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে মিল মালিকের সাথে চুক্তি করা সাজ্জাদুর রহমান লিংকনের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম রবি বলেন, মিলটির ফাকা জায়গা ব্যবহারের জন্য মালিকের সাথে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বরে একটি লিখিত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ইজারার সকল পাওনা টাকা পরিশোধ করা হয়। সর্বশেষ গত মে মাসের টাকা গত ৬ মে মিলের মালিকের পক্ষে ম্যানেজার প্রভাষ রায় রশিদের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে। তিনি বলেন আমরা বৈধ ভাবে মিলের জায়গা ব্যবহার করেছি। মিলটি আমরা দখলকারী নয় আমরা মালিক পক্ষের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সাময়িক ব্যবহারকারী মাত্র। বৈধভাবে জায়গা ব্যবহার করার সকল কাগজপত্র প্রমানাদি কমিটিকে যথা সময়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় শ্রমও পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মিলটির মালিক মিলটি বন্ধ রেখে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে শ্রম আইন লঙ্গন করে। এ বিষয়ে খুলনা শ্রম আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা হয় । মামলায় মিল মালিক কাওছার জামান বাবলার দুই বছরের সাজা হয়। পরবর্তিতে তিনি আপিল করেন মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। মালিক কাওছার জামান বাবলা মিলটি বিক্রয় করে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধে ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবর একটি আবেদন করেন। যেহেতু শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধের একটি বিষয়ে রয়েছে সে কারণে জেলা প্রশাসক মহোদয় এডিএমকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে শিল্প পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, কেএমপির উর্ধতন কর্মকর্তা, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদশক দপ্তর এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে অন্তরভুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, মিলটি কি অবস্থায় আছে, মিলটি অবৈধভাবে কেহ দখলে রেখেছে কিনা এ সকল বিষয়ে দেখতে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে স্ব-পক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে সেই অনুযায়ী লিখিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।