বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি অর্থনৈতিক ও উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে দোহায় শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহায় আয়োজিত এই বৈঠকে মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও কাতারের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বসহ প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বলেন, “বাংলাদেশ এখন আবার ব্যবসায় ফিরেছে এবং তা বড় পরিসরে। আমরা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা চাই, অংশীদারিত্ব চাই।”
এ সময় মালদ্বীপের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের এক সদস্য, মালয়েশিয়ার সাবেক মন্ত্রী, কাতারের রাজপরিবারের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং খাতের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী কয়েকজন সফল বাংলাদেশি উদ্যোক্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে। আমরা একটি স্বচ্ছ, টেকসই ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবসায়িক কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ শুধু শ্রমনির্ভর নয়, প্রযুক্তিনির্ভর এবং সবুজ শিল্পায়নের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, দেশকে একটি শীর্ষস্থানীয় উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।”
বিনিয়োগ সম্ভাবনায় আগ্রহ
বৈঠকে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ব্যাংকিং, হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ, বিশেষ করে কক্সবাজারে বিশ্বমানের ট্যুরিজম জোন গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তাদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, “আপনারা সরেজমিনে দেখে যান। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা আপনাদের প্রত্যক্ষ সংযোগ করে দেব।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
বিনিয়োগ আহ্বানে দ্বিতীয় বৈঠক
এর আগে, একই রাতে কাতারের ব্যবসায়ী সংগঠনের এক সভায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এখানকার বিপুল জনশক্তি, ক্রমবর্ধমান বাজার এবং দ্রুত উন্নয়নশীল অবকাঠামো আপনাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে।”
তিনি যোগ করেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ এমন একটি জায়গায় পরিণত হোক, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ, লাভজনক এবং দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে পারেন।”
বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপ
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠকটি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে একটি কৌশলগত প্রচেষ্টার অংশ। ভবিষ্যতে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে এ ধরনের বিনিয়োগ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দোহায় অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এবং বহুজাতিক বিনিয়োগ টানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।