বৃহস্পতিবার, মে ২২, ২০২৫

স্থানীয় সরকার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ:ভোট নয়,প্রতিনিধিরাই বাছাই করবেন চেয়ারম্যান-মেয়র!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • ২০২৫-০৪-২১ ০১:২৪:১০
ছবি সংগৃহিত

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় আসছে যুগান্তকারী প্রস্তাব—আগামীতে আর সরাসরি ভোটে নয়, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবেন চেয়ারম্যান ও মেয়র। এমনই এক রূপরেখা দিয়েছে সম্প্রতি গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, যা শুধু ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন নয়, বরং গণতন্ত্র চর্চার কাঠামোতেই নতুন এক বিতর্ক তৈরি করতে যাচ্ছে।
রোববার (২০ এপ্রিল), কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের টিম প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে জমা দিয়েছেন তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ। ৫১টি সুপারিশের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ‘দ্বি-স্তরীয় নির্বাচন ব্যবস্থা’—যেখানে সাধারণ ভোটাররা আর সরাসরি চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করবেন না।
নির্বাচনের জায়গায় প্রতিনিধি নির্বাচন: কেন এই বিপরীত ধারা?
কমিশনের ভাষ্য, বর্তমান সরাসরি নির্বাচনব্যবস্থায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে, ঘরানাভিত্তিক প্রার্থীরা কোটি কোটি টাকা ঢালেন নির্বাচনে, এবং দুর্নীতির প্রাথমিক চক্র শুরু হয় এখান থেকেই। তাই সদস্য-কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান ও মেয়র বাছাই করলে জবাবদিহিতা বাড়বে, আর স্থানীয় সরকার হবে আরও গণমুখী।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্রের ভিত্তি সরাসরি অংশগ্রহণে, সেখানে প্রতীকী জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষমতা নির্ধারণ আদৌ জনইচ্ছার প্রতিফলন কি না—এই প্রশ্ন থেকেই যাবে।

এক শিডিউলে দেশজুড়ে নির্বাচন,খরচ কমবে ৭০ ভাগ
কমিশনের আরেক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও সিটি নির্বাচনগুলো আলাদা আলাদা করে না করে একটিই সময়সূচিতে সব নির্বাচন শেষ করার পক্ষে তারা। এতে করে নির্বাচন খরচ ২,৩০০ কোটি টাকা থেকে কমে দাঁড়াবে ৭০০ কোটিতে। জনবলও লাগবে অর্ধেকের কম।

শুধু কাঠামো নয়,অর্থায়নেও নতুন চিন্তা
বর্তমানে স্থানীয় সরকারের জন্য জাতীয় বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকায় তাদের কার্যক্ষমতা সীমিত। কমিশন বলছে, জাতীয় রাজস্ব থেকে নির্দিষ্ট ভাগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানীয় সরকারে দেওয়া হোক। এতে করে তাদের স্বাধীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়বে।

নারী-স্বাস্থ্য-বিচার: তৃণমূলের নতুন অগ্রাধিকার
তৃণমূলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সংরক্ষিত ওয়ার্ড বাড়ানোর পাশাপাশি কমিশন সুপারিশ করেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে তিন চিকিৎসকসহ একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের। পাশাপাশি গ্রাম আদালত বাতিল করে উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে।

নতুন আইন, নতুন কাঠামো-‘লোকাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস’ আসছে
একটি নির্দিষ্ট “লোকাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস” গড়ে তোলার প্রস্তাব এসেছে কমিশন থেকে, যার মাধ্যমে নিয়োগ ও প্রশাসন হবে আলাদা ধাঁচে। সেই সঙ্গে ভূমি ব্যবহার আইনের মতো আরও ছয়টি নতুন আইন ও পুরনো আইন সংশোধনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যালোচনা: এটি কি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, নাকি ‘নির্বাচনের মুখোশে নিয়ন্ত্রণের কৌশল’?
এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে জনপ্রতিনিধিরা আর সরাসরি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন না—তাদের ওপর নির্ভর করবেন শুধু কাউন্সিলর বা সদস্যদের ভোট। ফলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের প্রভাব কমবে নাকি বরং নির্বাচিতদের 'ম্যানেজমেন্ট' বাড়বে—এ নিয়ে এখনই শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক।
এই সংস্কার প্রস্তাব কতটা কার্যকর বা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের ওপর—সংশ্লিষ্ট দলগুলোর প্রতিক্রিয়া, আর জনগণের মতামত। প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, এটি এখন পাবলিক ডিবেটে যাবে।শুরু হলো এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক আলাপ।


এ জাতীয় আরো খবর