পহেলা বৈশাখ, বা বাংলা নববর্ষ, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব। এটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসব হিসেবে পরিচিত, যা সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ উদযাপন করে। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে বাংলা সনের প্রবর্তন এবং কৃষি কর সংগ্রহ সহজ করার জন্য এই উৎসবের সূচনা হয়। সময়ের সাথে এটি একটি কৃষিভিত্তিক উৎসব থেকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রার সূচনা হয়। এটি বাঙালি সংস্কৃতি, ঐক্য এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে "মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তবে, মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অনেকেই ছবি, প্রতিকৃতি, মূর্তি তৈরি বা প্রদর্শনকে ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ মনে করেন। অন্যদিকে, অনেকেই এটিকে শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে দেখেন। এই মতপার্থক্য থেকে ক্ষোভ ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এ বছরও মঙ্গল শোভাযাত্রায় মূর্তি, মুরাল, প্রতিকৃতি এবং বিভিন্ন প্রতীক থাকবে, যা অনেকের প্রত্যাশার বিপরীত।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় সাধারণত রঙিন মুখোশ, প্রতীকী মূর্তি, এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। এটি বাঙালির ঐক্য, সংস্কৃতি এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হলেও, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।
এই বিতর্কের সমাধান খুঁজতে হলে, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। সকল সম্প্রদায়ের অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং ঐতিহ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
শেষ কথা: পহেলা বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিকড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং ভবিষ্যতের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই। বিতর্কের সমাধান খুঁজে এই ঐতিহ্যকে আরও শক্তিশালী করা আমাদের দায়িত্ব। মুক্ত আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্কের আয়োজন এরমাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।
প্রয়োজনে অনলাইনে এবং অফলাইনে ছবি, প্রতিকৃতি, মূর্তি ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের ধর্মীয় ভাবধারার প্রতি সম্মান রেখে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি করা যেতে পারে, যেমন যাদের জন্য মূর্তি বানানো পাপ বা গুনাহ নয় তাদের জন্য আলাদা অঞ্চল বা স্থানে আয়োজন করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। উপরন্তু, এই বিষয়ে একটি গণভোটের মাধ্যমে সকল সম্প্রদায়ের মতামত সংগ্রহ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপ শুধুমাত্র সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে না, বরং সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে সাহায্য করবে।