শনিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৫

বই রিভিউ- 'চব্বিশের বাংলাদেশ'

  • হাফিজ অলক রহমান
  • ২০২৫-০২-২৭ ১৪:১৭:২৭

ঔদ্ধত্য আর অহংকারের বিপরীতে সাধারণ জনগণের মাঝে ক্রোধের সৃষ্টি হয়। সামাজিক বৈষম্য যখন আশাহীন করে যাপিত জীবন। স্বাভাবিক জীবনধারণে যখন মন্থরতা দেখা দেয়। নাগরিকের যখন আর নাগরিকত্ব বলে কিছু থাকেনা, ঠিক তখনই চেপে থাকা এই ক্রোধ-উন্মত্ততা সময়ের প্রক্ষালনে সচেতন ভাবেই বিস্ফোরণের সৃষ্টি করে।
নানান বৈষম্যের শিকার বাঙালি নামক এই জাতির মাঝে সচেতনতার সেই বিস্ফোরণ ঘটে চব্বিশের জুলাইয়ে। বিপণ্ণ নাগরিক, নাগরিক হয়ে উঠার জন্যে আওয়াজ তোলে—
নির্বাচন, গণতন্ত্র, ফ্যাসিবাদ, এইসব নিয়ে। আওয়াজ তোলে স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্তির আশায়।

'চব্বিশের বাংলাদেশ'
লেখকের পঞ্চম গ্রন্থ, 
একজন সংবাদকর্মী মেসবাহ য়াযাদের।
লেখক হিসেবে ২০২৪ এর ১৪'জুলাই থেকে ১৫'আগস্ট পর্যন্ত দিনপঞ্জি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে মলাটবদ্ধ করেছেন চব্বিশের অক্টোবরেই।
বইটি প্রাকাশ করেছে সাহিত্যদেশ। 
প্রচ্ছদ করেছেন বিপুল শাহ। 
বইটির গায়ের মূল্য ৪০০/- টাকা, 
২৫% ছাড়ে ৩০০/- টাকা।
বইটি পাঠে নিশ্চিত হওয়া যায় Mesbah Aajad  চব্বিশে'র উত্তাল আন্দোলনের দিনগুলোতে খুবখুব কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেছে আগামী প্রজন্মের গবেষণার জন্যে। 
জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম হপ্তা, অনেকেই হয়তো অনেকের মতো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে— শংকায়-আশংকায়। 
প্রতি রাতেই ভাবতে হয়েছে আগামী সকাল-টা বা দিনটায় কী ঘটতে যাচ্ছে। 
এবারের অভ্যুত্থান-ইতিহাসের বড় নির্মমতা— অনেক গুলো জীবন কেড়ে নেয়া।
২০১৮'র কোটা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এ যে কোটা আন্দোলনের সূত্রপাত, 
সেই  আন্দোলনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা ক্ষমতাসীনদের মসনদটি হুড়মুড় করে গুড়িয়ে যাবে, সে অনেকেই কস্মিনকালেও ভাবেনি!
১ জুলাই থেকে হিসেব করলে মাত্র ৩৬ দিন!
জাতি দীর্ঘ ১৬ টি বছর অনেক আন্দোলন দেখেছে, দেখেছে রাজনৈতিক দলগুলোর হুংকার, শুনেছে ঈদের পরের আন্দোলনের কথা! জাতির জীবনে আর ঈদ আসেনি। আসেনি মুক্তির কোনো উপলক্ষ। 
এবার সেই তরুণ-ছাত্র প্রজন্মের ডাকেই একাট্টা হয়ে রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের জনগণ। সেই তরুণ ছাত্রদের আন্দোলন ক্রমেক্রমে হয়ে উঠে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জাতি নাগরিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। 
লেখক, কোটা আন্দোলনের পটভূমি লিখার পরেই শুরু করে ১৪ জুলাই এর ঘটনাপ্রবাহ। দিনটি রোববার। 
চীন থেকে বিফল হয়ে ফেরা শেখ হাসিনার কথিত সংবাদ সম্মেলন।
বিকেল ৪টায় গণভবনে চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা দু'জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন— ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে? এটি দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন।’
বরাবরের মতোই সাজানো-গোছানো সাংবাদিকদের প্রশ্ন আর প্রশ্নের জবাব!
যে দু'জন সাংবাদিকর প্রশ্নের ধারাবাহিকতায় এমন মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা তা লেখক উল্লেখ না করলেও আমরা জানি সেই দু'জন হচ্ছে সুবিধাভোগী ফারজানা রূপা আর প্রভাষ আমিন।
রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
'তুমি কে, আমি কে, 
রাজাকার, রাজাকার,
কে বলেছে… কে বলেছে… স্বৈরাচার, স্বৈরাচার'
'চাইতে গেলাম অধিকার,  হয়ে গেলাম রাজাকার'
এমনই শ্লোগানে শ্লোগানে ভিন্নমাত্রা পায় আন্দোলন। জঙ্গীত্বের বয়ান শুনতে শুনতে স্বাভাবিক ভাবেই বিতৃষ্ণার জন্ম নেয় জাতির বোধবুদ্ধিতে। ভালো মন্দের ফারাক বুঝতে শুরু করে সবাই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায় ঘাটতি দেখা দেয়। 
ভিন্ন-ভিন্ন দিনে, নব-নব মাত্রার আন্দোলনে দেশ ক্রমশ অচল হতে শুরু করে। 
শাটডাউন, কমপ্লিট শাটডাউন, ব্লকেড, লংমার্চ বিভিন্ন ধাঁচের অভিধার প্রোগ্রাম, শেষমেশ পদত্যাগের একদফা দাবিতে রুপান্তরিত হয়ে, 
৫ আগস্ট এসে হাজির হয় জাতির সামনে।
এর মাঝে দমন-পীড়নের সব মাধ্যম অবলম্বন করে স্বৈরাচার সরকার। 
জাতি বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে থাকে।
ইন্টারনেটে বন্ধ থেকে কারফিউ'র মতো অবস্থার সম্মুখীন হয় গোটা দেশের মানুষ।
১৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ  ক্রমান্বয়ে লেখার পরে আসে—
৫ আগস্ট সোমবার,
মেসবাহ লিখতে শুরু করেন নির্মোহ ভাবে পুরোটা দিনের ঘটনা। লিখেন কারফিউ তোয়াক্কা না করা ছাত্র-জনতার কথা।
লিখেন মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের কথা।
লিখেন গণমাধ্যমের দ্বিচারিতার কথা। লিখেন সশস্ত্র বাহিনীর কথা। লিখেন রাজনৈতিক দলের কথা। লিখেন একদিনেই ৯০ জন নিহতের কথা।
লিখেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা।
লিখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অভিপ্রায়ের কথা।
এভাবে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরে লিখেন— বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিস্তারিত। ১৫ আগস্টের ঘটনা প্রবাহের পরে, 'শেষাংশ' থেকে 'চেনা মুখগুলো অচেনা' অধ্যায়ে লিখে ফেলেন ব্রিটিশ শাসনামল, ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ৭১'এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫'এর ১৫ আগস্ট থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন,গণজাগরণ মঞ্চ থেকে কোটা আন্দোলনের বিস্তারিত। 
ক্ষমতা যখন জাতিকে সাদা-কালো'য় বিভক্ত করে, তখনই নাগরিক সমাজ তোতলায়! 
সমাজনীতি, রাজনীতি আর রাষ্ট্রনীতিতে— 
সাদা-কালো'র প্রভাব বহুদলীয় নাগরিক সমাজকে অসহনীয় করে তোলে বিভক্তি'র  বিষাক্ত ছোবলে। 
দিশেহারা জাতি অতীতকে, ইতিহাসকে হারিয়ে ফেলে, ভুলে যায় তাঁর গৌরবের কথা, সংগ্রামের কথা। অতীত হচ্ছে অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যত হচ্ছে প্রত্যাশার।
জুলাই-আগস্টের সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা ভবিষ্যতে যাতে আমরা ভুলে না যাই। 
এমনটা যাঁরা ভাবেন, বা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিয়ে যাঁরা ভাবতে চান, বা ভবিষ্যতের প্রজন্ম যাঁরা আন্দোলনের ভেতরের নির্জাস নিতে চান, তাঁরা অবশ্যই 'চব্বিশের বাংলাদেশ' বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন।
পাওয়া যাচ্ছে—
অমর একুশে বইমেলা,
সাহিত্যদেশ 
স্টল নম্বর  ৫৯৪—৪৯৫


এ জাতীয় আরো খবর