কাজী নজরুল ইসলাম ২৪ মে ১৮৯৯ সালে জন্ম গ্রহণ করে ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ সালে ৭৭ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
তিনি ছিলেন জাতীয় একজন বাঙালি কবি ওছোটগল্পকার, সাংবাদিক,গীতিকার এবং সঙ্গীতজ্ঞ।কবি নজরুল সমতা, ন্যায়বিচার,সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা,মানবতা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ধর্মীয় নিষ্ঠাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতা
,সঙ্গীত,বার্তা,উপন্যাস এবং গল্পের এক্টি বিশাল অংশ তৈরি করেছিলেন।
তিনি রাজনৈতিক_সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সক্রিয়তার পাশাপাশি "বিদ্রোহী"নামে একটি কবিতা লেখার জন্য তাকে "বিদ্রোহী কবি"উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন!তাঁর রচনাগুলি নজরুল গীতি (নজরুলের সঙ্গীত)এর অগ্রগামী সঙ্গীত ধারা গঠন করে।
ব্রিটিশ রাজত্বকালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় এক বাঙালি মুসলিম কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
নজরুল ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন এবং যুবক বয়সে স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেন । গ্রামীণ নাট্যদল লেটোর দোলের সাথে কাজ করার সময় তিনি কবিতা,নাটক এবং সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।লেটো পশ্চিমবঙ্গের একটি লোকসঙ্গীতের ধারা, যা সাধারণত এই অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিবেশন করে।
তিনি ১৯১৭সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং করাচিতে নিযুক্ত হন।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নজরুল ইসলাম কলকাতায় একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।সেসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের সমালোচনা করেন ও"বিদ্রোহী""ভাঙ্গার গান" বা ধ্বংসের গান এবং নিজের প্রকাশনা ধুমকেতুর মাধ্যমে বিপ্লবের ডাক দেন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর জাতীয়তাবাদী সক্রিয়তার কারণে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে বাধ্য করে। কারাগারে থাকাকালীন নজরুল ইসলাম "রাজবন্দীর জবানবন্দী"('একজন রাজনৈতিক বন্দীর জবানবন্দী') লিখেছিলেন।
এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁর লেখাগুলি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল ।
নজরুল ইসলামের লেখায় স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম এবং বিপ্লবের মত বিষয়বস্তু অন্বেষণ করা হয়েছিল।তিনি ধর্মীয়, বর্ণ -ভিত্তিক এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহ সকল ধরণের গোঁড়ামি এবং মৌলবাদের বিরোধিতা করেছিলেন।
কবি নজরুল ছোটগল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধ লিখেছিলেন কিন্তু তাঁর গান এবং কবিতার জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত।তিনি বাংলা ভাষায় গজল গানের প্রচলন করেছিলেন এবং তাঁর রচনায় আর্বি ও ফারসি প্রভাবিত বাংলা শব্দের ব্যাপক ব্যবহারের জন্যও তিনি পরিচিত।
কাজী নজরুল ইসলাম প্রায় ৪,০০০ গান লিখেছেন ও সুর করেছিলেন যা অনেকগুলো গ্রামোফোন কোম্পানি ইন্ডিয়া গ্রামোফোন রেকর্ডে রেকর্ড করা হয়েছিল,যা সম্মিলিতভাবে নজরুল গীতি নামে পরিচিত।
১৯৪২ সালে ৪৩ বছর বয়সে, তিনি এক অজানা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেন,তার কণ্ঠস্বর ও স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন।
ভিয়েনার একটি মেডিকেল দল রোগটিকে পিকস ডিজিজ হিসাবে নির্ণয় করে,যা একটি বিরল নিরাময়যোগ্য নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ।
পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় কবির অসুস্থতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন ও ডঃ হফের সাথে দেখা করতে ভিয়েনা যান।এই রোগের কারণে নজরুল ইসলামের স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতি ঘটে ওতাকে বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে বাধ্য করা হয়।ডঃ হফ মতামত দেন যে রোগটি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নজরুলের আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা খুব কম।
কলকাতার নিউরোসার্জন ডঃ অশোক বাগচীও ভিয়েনায় থাকাকালীন কবির চিকিৎসায় ভূমিকা পালন করেছিলেন।তিনি বহুবছর ধরে রাঁচিতে'ঝাড়খণ্ড'মানসিক হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন।
বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সরকারের সম্মতিতে ১৯৭২ সালের ২৪ মে অসুস্থ অবস্থায় জন্মস্থান ভারত থেকে কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়।পরিবারও তার সাথে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।
পরবর্তীতে,১৯৭৬ সালের ১৮ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।এরপর তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মারা যান।
মারা গিয়েও তিনি স্থান করে আছেন মানুষের অন্তরে এবং একইভাবে স্বরনীয় বরনীয় হয়ে আছেন হৃদয়ে প্রতিবাদী ও এক জলন্ত প্রতিভা হয়ে সকল ভক্ত অনুরাগীদের মনে।আর আজও আমরা সবাই বিদ্রোহী ও প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে চলেছি।এবং এই দ্রোহের কবি প্রেমের কবি মানবতার কবি ওপারে ভাল থাকুন সেই কামনা করি।
লেখকঃগনমাধ্যম ও সমাজকর্মী এবং সাংবাদিক