ঢাকা | ১৯ মে ২০২৫
সমুদ্র থেকে পদযাত্রা শুরু করে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয়-এই দুঃসাধ্য অভিযানে নতুন ইতিহাস লিখলেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল হক শাকিল।
মাত্র ৯০ দিনে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের ২৯,০৩১ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে গড়েছেন এক বিশ্বরেকর্ড।
শাকিল হয়েছেন সপ্তম বাংলাদেশি, যিনি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন। তবে তার অভিযান বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে ‘সি টু সামিট’ নামে একটি অভিনব অভিযাত্রার অংশ হিসেবে-যেখানে বাংলাদেশের ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে এভারেস্ট পর্যন্ত তিনি পদযাত্রায় পাড়ি দিয়েছেন এই পথ।
সোমবার (১৯ মে) সকালে অভিযানের সমন্বয়ক এবং বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের (বিএমটিসি) সদস্য সাদিয়া সুলতানা শম্পা জানান, “শাকিল সফলভাবে এভারেস্ট জয় করে ক্যাম্প-৪ এ ফিরেছেন। এখনও তার অবস্থান নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও অভিযানের দায়িত্বে থাকা সংস্থা আমাদের নিশ্চিত করেছে তার সফলতার খবর।”
যদিও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় আরোহণের সুনির্দিষ্ট সময় ও সঙ্গীদের তথ্য এখনো আসেনি, তবে শিগগিরই তার ছবি ও ভিডিও পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়।
শাকিলের এই দুঃসাহসিক অভিযান তুলনায় আসে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ান পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ-এর সঙ্গে, যিনি ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্ট জয় করেছিলেন।
তুলনামূলকভাবে শাকিল এক সপ্তাহ কম সময় নিয়ে এবং প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সেই রেকর্ডকে অতিক্রম করেন।
ইকরামুল হক শাকিল হলেন সপ্তম বাংলাদেশি, যিনি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেন।
এর আগে এই কীর্তি গড়েছেন-মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন, খালেদ হোসেন ও বাবর আলী। তবে এই প্রথম, কেউ একজন সমুদ্র থেকে পদযাত্রা শুরু করে এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছালেন।
শাকিলের এই অভিযান শুধু পর্বতারোহণ নয়, এর সঙ্গে ছিল জলবায়ু পরিবর্তন, প্লাস্টিক দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ বিরোধী বার্তা।
সামাজিক বার্তা বহন করেই তিনি পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নানা প্রাকৃতিক ও দুর্গম অঞ্চল।
অভিযাত্রার সময়রেখা:
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে শাকিলের যাত্রা শুরু
মার্চ-এপ্রিল ২০২৫: বাংলাদেশ ও ভারত পাড়ি দিয়ে নেপালে প্রবেশ
মে ২০২৫: এভারেস্টের বেসক্যাম্প হয়ে সফল আরোহণ
১৯ মে ২০২৫: ক্যাম্প-৪ থেকে সফল শৃঙ্গজয়ের তথ্য প্রকাশ
এই অসাধারণ অভিযাত্রার পেছনে ছিল দীর্ঘ প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতা। ২০১৩ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় ১১ দিনের পদযাত্রা দিয়েই শাকিল শুরু করেন অনুশীলনের প্রথম ধাপ।
এরপর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশসহ নানা অভিযানে অংশগ্রহণ, কেয়াজো-রি, দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২, হিমলুং শৃঙ্গ জয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেন এই অভিযানটির জন্য।
পর্বতারোহণ আজও বাংলাদেশে একটি অপেক্ষাকৃত নতুন ক্ষেত্র। শাকিলের এই সফলতা প্রমাণ করলো, স্বপ্ন আর অধ্যবসায় থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও এভারেস্ট জয় সম্ভব।
তিনি কেবল একজন পর্বতারোহী নন, বরং একজন জীবন্ত অনুপ্রেরণা, যিনি তরুণ প্রজন্মকে জানালেন-সম্ভবের সীমানা কোথায় গিয়ে ঠেকে।