বাংলা ও বাঙালির চরম দু:সময়ে বরাবর রুখে দাঁড়ানো মানুষটির নাম নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
উত্তাল একাত্তরে রণাঙ্গনের সরাসরি সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি মঞ্চ নাটকের সুবর্ণপুত্র নামে খ্যাত।
বাচ্চু ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রখ্যাত নাট্যকার সেলিম আল দীনের সঙ্গে তিনি বাংলা নাটকের শেকড়সন্ধানী কর্মে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন।
বাংলামঞ্চে উল্লেখযোগ্য অনেক নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি, যা নাট্যে বা থিয়েটারে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এজন্য তাঁকে মঞ্চের কান্ডারি বলে ডাকা হয়।
তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'একাত্তরের যীশু'। 'গেরিলা' চলচ্চিত্র পরিচালনা করে তিনি অর্জন করেন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ ১৯৭২ সালে নাট্যকার সেলিম আল দীনকে নিয়ে 'নাট্যক্রম' মঞ্চদলের সাথে নাটক নির্মাণ শুরু করেন।
পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে তাঁরা দুজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন মঞ্চদল 'ঢাকা থিয়েটার'।
প্রথমদিকে পাশ্চাত্য ধারার নাটক পরিচালনা করলেও পরে সেলিম আল দীন রচিত অনেক নাটকের নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন।
এগুলোর মধ্যে কীত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, হাতহদাই, যৈবতীকন্যার মন, বনপাংশুল, প্রাচ্য ও নিমজ্জন উল্লেখযোগ্য।
১৯৮০ সালে চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত 'ঘুড্ডি' চলচ্চিত্রে তিনি বাচ্চু চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন।
১৯৯৩ সালে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'একাত্তরের যীশু' তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র।
বিশ্বখ্যাত গ্লোব থিয়েটারে ২০১২ সালে তাঁরই নির্দেশনায় প্রথম বাংলা ভাষার নাটক হিসেবে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের 'দ্য টেম্পেস্ট' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এটির অনুবাদ ও রূপান্তর করেছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ।
২০১৪ সালে বিখ্যাত লেখক আলব্যের কাম্যুর আলোচিত উপন্যাস ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’ ‘আউটসাইডার’ নামে মঞ্চায়ন করেন। এটিরও নাট্যরুপ দিয়েছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ।
সর্বশেষ ২০১১ সালে তিনি 'গেরিলা' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করে।
মঞ্চকুসুমখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শিমুল ইউসুফ তাঁর স্ত্রী। শিমুল বিখ্যাত এক পরিবারের সন্তান। তাঁদের একমাত্র মেয়ে এষা ইউসুফ।
কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ ভুষিত হয়েছেন একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায়।
জন্ম পনেরো এপ্রিল উনিশশো পঞ্চাশ সালে। পঁচাত্তর পেরিয়ে আজ ছিয়াত্তরে পা রাখলেন তিনি। জীবন থেকে খসে পড়লো তাঁর আরও একটি বছর।
আজকের এই বিশেষ দিনটিতে তাঁর জন্য রইল শুভ কামনা।