তাঁর পুরো নাম প্রণব ঘোষ খোকন। তবে সঙ্গীতাঙ্গনে তিনি প্রণব ঘোষ নামেই সমধিক পরিচিত।
১৯৭১ এ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে দেশ স্বাধীনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন শিল্পী প্রণব ঘোষ।
জন্ম ১৯৫০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যশোর শহরের মাইকপট্টি সংলগ্ন বাগমারা পাড়ায়।
পিতা প্রফুল্ল ঘোষ ছিলেন একজন আইনজীবি এবং মাতা রত্না প্রভা ঘোষ ছিলেন গৃহিণী। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে প্রণব সবার ছোট।
সত্তরের দশকে তিনি সাবিহা চৌধুরী চম্পাকে বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে মোহাম্মদ সফি প্রণব নাম ধারণ করেন। এক কন্যা সন্তান আছে এই দম্পতির।
তাঁর আদি পৈত্রিক নিবাস নড়াইলের কলাগাছিতে। চাকরি করতেন পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।
পড়াশোনা করেছেন যশোর সরকারি এম এম কলেজে। কলেজে পড়াকালীন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রণব গানের শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রিত হতেন।
১৯৮১ সালে প্রণব ঘোষ প্রথম চলচ্চিত্রে গান করেন আবদুল্লাহ আল মামুনের চিত্রনাট্যে ‘এখনই সময়’ ছবিতে সেখসাদী খানের সুরে ‘আমি রাজ্জাক হইলাম না, আমি কবরী হইলাম না, আল্লাহ কেন নায়ক কইরা জন্ম দিল না।’ গানটি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
সুরকার হিসেবে তিনি তালিম নিয়েছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত সুরকার দেবু ভট্টাচার্য, শেখ সাদী খান, আনোয়ার পারভেজ ও সুবল দাসগুপ্তের কাছে।
প্রণবের জীবনের প্রথম ক্যাসেটের শিল্পী ছিলেন উমা খান। পরবর্তীতে শিল্পী ছিলেন মুশরাত শবনব, শরীফ রানা ও শুভ্র দেব।
কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁকে নিজের জায়গা করে নিতে হয়েছিল সঙ্গীতাঙ্গনে।
দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক শিল্পীকে দিয়ে তিনি গান করিয়েছেন।
ভারতের কুমার শানু, আমাদের রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ রহ্মতুল্লাহ, এ্যান্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, বেবী নাজনীন, কনক চাঁপা, মমতাজ, খালিদ হাসান মিলু, আইয়ুব বাচ্চু, রবি চৌধুরী, ডলি সায়ন্তনী, আঁখি আলমগীর, হাসানসহ বাংলাদেশের সমস্ত শিল্পীই তাঁর সুরে গান গেয়েছেন। পেয়েছেন প্রতিষ্ঠা। জনপ্রিয়তাও পেয়েছে তাঁর বহু গান।
চলচ্চিত্র ও আধুনিকসহ প্রায় তিনশোরও অধিক গানে সুরারোপ করেছেন তিনি। বাংলা গানে প্রণব ঘোষ সৃষ্টি করেছিলেন ভিন্ন এক ধারা।
তাঁর সুরে শেষ গানটি ছিল পরিচালক নার্গিস আক্তারের 'মেঘের কোলে রোদ' চলচ্চিত্রের।
১৬ আগস্ট ২০০৭ সালে চিরদিনের মতো স্তব্ধ হয়ে যায় এই সুরস্রষ্টার সুরের ঝঙ্কার। শ্রদ্ধাঞ্জলি।