শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৫

জনপ্রিয় খলনায়ক বাবর এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

  • এ কে আজাদ
  • ২০২৩-০৮-২৬ ১২:২১:১৬

বাবর। অভিনেতা। চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালক।জনপ্রিয় খলনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ সফলতা পেয়েছেন বাবর। বহু হিট-সুপারহিট ছবিতে দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন। সেই সময়ের সব টপ নায়ক-নায়িকাদের বিপরীতে তিনি ছিলেন জাঁদরেল ভিলেন ।জনপ্রিয় খলনায়ক বাবর এর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। 
তিনি ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। প্রয়াত এই গুণি অভিনেতার স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।  

No description available.
বাবর (আবু মোহাম্মদ খলিলুর রহমান) ১৯৫২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার গেন্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবর খুব ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের সাথে যুক্ত।
১৯৫৮ সাল থেকে 'ঢাকা রেডিও'তে ছোটদের অনুষ্ঠান ও নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করতেন । ১৯৬৭ সাল থেকে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন তিনি।
১৯৭২ সালে আমজাদ হোসেন 'বাংলার মুখ' চলচ্চিত্রে বাবর'কে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ দেন। যদিও ছবিটি মুক্তিপায়নি। ঐ ছবির সুটিং চলাকালীন সময়ে নায়করাজ রাজ্জাক তাঁকে 'রংবাজ' ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। 'রংবাজ' ছবির মাধ্যমেই বাবর-এর খলনায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। জহিরুল হক পরিচালিত ছবিটি মুক্তিপায় ১৯৭৩ সালে।
বাবর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিসমূহ- দুরন্ত দূর্বার, শ্লোগান, আপনজন, গুন্ডা, তালবেতাল, অবাক পৃথিবী, বেঈমান, সাধু শয়তান, দাবী, সমাধি, গরমিল, আগুন, প্রতিনিধি, অনুরোধ, অনুভব, রক্তশপথ, অশিক্ষিত, সারেং বৌ, মতিমহল, সৎমা, নাণ্টুঘটক, আসামী, জোকার, মাস্তান, শেষ উত্তর, নাগিন, সংঘর্ষ, জনতা এক্সপ্রেস, অংশিদার, বানজারান, দখল, চীৎকার, সিকান্দার, প্রেমনগর, মহানগর, ভাগ্যলিপি, সখিনার যুদ্ধ, জিপসীসর্দার, পুরস্কার, প্রিন্সেস টিনা খান, আয়না মতি, নাগমহল, ইন্সপেক্টর, প্রেমিক, নূরী, নাগরাণী, বিচারপতি, দাগী, ডাকু ও দরবেশ, আওলাদ, উজানভাটি,  প্রেমকাহিনী, মালা বদল, মাস্তান দাদা, নির্দোষ, গাদ্দার, পুষ্পমালা, সন্ধি, সতীকমলা, হুমকী, নির্দয়, সন্ধান, নির্যাতন, বাহার, মরণপণ, দেবর ভাবী, রিক্সাওয়ালা, হিসাব চাই, শর্ত, আদরের বোন, লেডি কমান্ডো, বিদায়, জুলুমবাজ, তুফান মেইল, নাগরানী, লেডি স্মাগলার, স্বপ্ন, দুর্জয়, রাঙা বউ, ফুলেশ্বরী, এই নিয়ে সংসার, জীবনের গল্প, তের গুণ্ডা এক পাণ্ডা, ইত্যাদি।   

No description available.
দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতায় বাবর চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনাও করেছেন। তাঁর প্রযোজিত ছবি- ইন্সপেক্টর, দাগী, মাস্তান দাদা ও দয়াবান। এর মধ্যে
'দয়াবান' ছবিটি তিনি নিজে পরিচালনা করেন।
একসময় বাবর অভিনয়ের বিরতি দিয়ে ব্যবসায় মনযোগী হন। কিন্তু ব্যবসায় তাঁর সফলতা আসেনি। এরপর টেলিভিশনের জন্য নাটক নির্মাণ শুরু করেন। তিনি বেশ কয়েকটি টিভি নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।
ব্যক্তিজীবনে বাবর, সুলতানা রহমান-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান, মেয়ে সাইনা রহমান ও ছেলে রিয়াদুর রহমান।
অভিনেতা-প্রযোজক-পরিচালক বাবর, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন ।
খলনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ সফলতা পেয়েছেন বাবর। 
বহু হিট-সুপারহিট ছবিতে দাপটের সাথে অভিনয় করে গেছেন। খলনায়ক হিসেবে একসময় চলচ্চিত্রে তাঁর যেমন চাহিদা ছিল, তেমনই ছিল জনপ্রিয়তাও। সেই সময়ের সব টপ নায়ক-নায়িকাদের বিপরীতে তিনি ছিলেন জাঁদরেল ভিলেন ।

No description available.
জনপ্রিয় শক্তিমান খলঅভিনেতা বাবর কিছু কিছু ছবিতে ব্যতিক্রমী কিছু চরিত্রেও কাজ করেছেন। 'বেঈমান'- ছবিতে সহজ-সরল পাহাড়ি উপজাতির চরিত্র, যেখানে তাঁর সাথে নায়িকা থাকে শর্ব্বরী। 'ইন্সপেক্টর'- ছবিতেও, ওয়াসিমের সাথে দুই নায়কের এক নায়ক ছিলেন বাবর। মহানগর- ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাকের বন্ধুর চরিত্রে ছিলেন। 'প্রতিনিধি'- ছবিতে বাবর একটি মাত্র দৃশ্যে, কামাড়ের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। 'পুরস্কার'- ছবিতে ছিলেন সহজ-সরল এক শিক্ষক। আর 'সারেং বৌ'-ছবিতে নিরিহ এক গ্রাম্য যুবক। এই ছবিতে তাঁর সেই ঐতিহাসিক সংলাপ- 'আমার কোনো আপেত্তি নাই'.., সেই সময়ে বহুল জনপ্রিয় ছিল। এসব থেকেই প্রমানিত হয় বাবর কত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন।
প্রতিভাবান অভিনেতা বাবর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন, চলচ্চিত্রে তাঁর সৃজনশীল কর্মের মাধ্যমে।

 


এ জাতীয় আরো খবর