মি শু ক সে লি ম

  • এই পথ আমার নয়
  • ২০২৫-১১-০৫ ২২:১৪:২৩
image

রাত তখন আধো ঘুমে ডুবে আছে শহর,
স্টেশনের আলোয় ঝিমিয়ে পড়েছে একাকীত্ব।
আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম প্ল্যাটফর্মে-
হাতে ছোট্ট এক ব্যাগ, তাতে কিছু পোড়া স্বপ্ন,
কয়েকটা অসমাপ্ত চিঠি, আর পুরনো এক ঠিকানা।

ট্রেনটা এলো নিঃশব্দে, ধোঁয়া মেশানো বাতাসে।
ডেকে যেন বলল-“চলো, দেরি হচ্ছে।”
আমি কিছু না ভেবে উঠে পড়লাম।
ভাবলাম, হয়তো এটাই আমার গন্তব্যের ট্রেন।

প্রথম কয়েকটা স্টেশনে নামেনি কেউ,
বাইরে কুয়াশা, আলো নিভে নিভে জ্বলে।
আমি জানালায় মুখ রাখি-
অচেনা গাছপালা, অচেনা মুখ,
তবু মনে হয়-কোথাও যেন দেখেছি আগে!

ভেতরের যাত্রীরা সবাই ব্যস্ত নিজেদের গল্পে।
কেউ পুরোনো শহর ছেড়ে যাচ্ছে,
কেউ নতুন এক জীবনের পথে।
আমি চুপচাপ শুনি, যেন নিজেরই কথা।

একসময় মনে হলো-কিছু একটা ঠিক নয়।
এই পথ আমার নয়, এই গন্তব্যও নয়।
তবু আমি নামলাম না,
ভাবলাম-হয়তো একটু পরেই
চেনা কোনো স্টেশন আসবে।

কিন্তু প্রতিটা মোড়েই দূরত্ব আরও বেড়ে গেল।
পরিচিত মুখগুলো মিলিয়ে গেল ধোঁয়ায়,
বাইরে কেবল অন্ধকার,
আর ভেতরে একরাশ নীরবতা।

যখন সাহস করে নামলাম,
তখন স্টেশনের নাম পড়া যায় না কুয়াশায়।
হৃদয়ের মানচিত্রে ফেরার পথ ঝাপসা,
জানলাম-যত দেরি করি,
ততই জটিল হয়ে ওঠে ফিরে আসা।

পথের ধারে এক বৃদ্ধ বলল-
“বাবা, ভুল ট্রেনে উঠলে,
আগের স্টেশনেই নেমে যেও,
কারণ সময় ফেরে না,
ফেরে কেবল অনুশোচনা।”

আমি মাথা নত করে হাঁটতে লাগলাম—
পেছনে ছুটে চলে গেল ট্রেনটা,
যেন আমারই এক অংশকে নিয়ে গেল দূরে।

এখনো কখনও রাতে ট্রেনের হুইসেল শুনলে
মনে হয়-আমি এখনো সেই যাত্রী,
ভুল ট্রেনে উঠে গিয়েছিলাম একদিন,
এবং নামতে দেরি করেছিলাম —
নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে।