চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জেও হানা দিয়েছে ডেঙ্গু। বছরের প্রথম ৭ মাস মোটামুটি ভাল কাটলেও গত আগষ্ট থেকে জেলায় সরকারিভাবে বেশি শনাক্ত হতে শুরু করে রোগি। ভর্তি হওয়া শুরু হয় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, জেলায় এডিসের লার্ভা বা মশার কোন তথ্য এখনও জানা যায় নি। যে সব রোগি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের তথ্য বিশ্লেষন করে জানা গেছে বেশিরভাগেরই মূলত: ঢাকা বা দেশের অনান্য অঞ্চল ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। এদিকে জেলার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের জন্য জেলা হাসপাতালসহ কোন হাসপাতালেই এখনও নেই আইসিইউ সাপোর্ট। নেই সেল সেপারেটর মেশিন। রোগিকে প্রয়োজনে দেয়া যায় না প্লাটিলেট। ফলে হেমোরেজিক বা শক সিনড্রোমে আক্রান্ত্র কোন রোগিকে জেলায় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। রেফার্ড করতে হয় রাজশাহী বা ঢাকায়। শুধু ক্লাসিকাল ডেঙ্গু রোগির চিকিৎসা জেলায় সম্ভব। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সোমবার(২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা পর্যন্ত চলতি বছর জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫২ জন ডেঙ্গু রোগি শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়াও বছররব্যাপী বহি:বিভাগে শনাক্ত হয়ে বাড়িতে বা অন্যত্র চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। সরকারিভাবে শনাক্তদের মধ্যে শুধু জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। এখন ভর্তি রয়েছেন ১০ জন। জেলায় এখনও কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নি।
সিভিল সার্জন ডা.মাহমুদুর রশিদ বলেন, ডেঙ্গু চেঁঅয়াচে রোগ নয়। তবে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে কামড়ানো মশা অন্য ব্যাক্তিকে কামড়ালে ডেঙ্গু হতে পারে। জেলা হাসপাতাল ছাড়াও জেলার ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থাা রয়েছে। জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার ডেঙ্গু কর্ণার রয়েছে। অনান্য হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যায় মশারি টাঙ্গিয়ে রোগি রাখা হয়। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসার মূল হাতিয়ার আইভি স্যালাইনের(ফ্লুইড)। প্রতিটি ৫০ টাকা করে ফিস দিয়ে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে। শনাক্তের জন্য দু’ ধরণের টেষ্টের দরকার হতে পারে। তবে সকলের দু’ধরণের টেষ্টের দরকার হয় না। প্রতিটি হাসপাতালে টেস্ট কীটের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। প্লাটিলেট কাউন্ট রক্তের রুটিন সিবিসি টেষ্টেই করা যায়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু রোগি দেখেন। জেলা হাসপাতাল ও ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধরণের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। শুধু ভোল জেলার বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালেও ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসার সুবিধে থাকলেও তাদের রোগি সংখ্যার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি।
ডা. রশিদ আরও বলেন, জেলায় এখনও ডেঙ্গু আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তারা ক্লাসিকাল ধরণের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হেমোরজিক বা শক সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগি এখনও তেমন পাওয়া যায় নি। জেলা থেকে অল্প কয়েকজন রোগিকে এখন পর্যন্ত বাইরে রেফার্ড করতে হয়েছে মূলত: আইসিইউ সাপোর্ট না থাকার কারণে।
জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন,হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ও ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড (হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট-এইচডিইউ) নির্মাণের একেবারে শেষ পর্যায়ে। এটি চালু হলে জেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা একধাপ উন্নতি হবে। তবে এটি জনবল ও অনান্য লজিষ্টিক সাপোর্টসহ কবে চালু হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এটি দ্রæত চালু হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্রিষ্টরা।
সিভিল সার্জন বর্ষা ও বর্য়া পরবর্তী বছরের এই সময়টা নিয়ে সতর্ক থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপর জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে জেলা সদরের দিকে নজর দেবার কথা বলেছেন। তথ্য অফিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দিয়ে মাইকিং থেকে শুরু করে লিফলেট বিতরণ, মসজিদে পর্যন্ত যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে ব্যাপারেও বলেছেন। ভবিষ্যতে আরও প্রতিরোধ প্রচারণার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন।