চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ও উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাত ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলেছে।
প্রথমে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে স্থানীয় শিল্পীগোষ্ঠী থেকে শুরু করে জনপ্রিয় কলরব শিল্পীগোষ্ঠী, মুছলিহীন শিল্পীগোষ্ঠী ও রেসালাহ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়।
সাকিব হাসান রুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব ও দোয়া পরিচালনা করেন চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি ড. মোঃ শহীদুল হক। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রফেসর ড. আতিয়ার রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।
উপস্থিত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে ড. শহীদুল হক বলেন, আমি অত্যন্ত আবেগাপ্লুত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনে করা হতো ইসলামিক কোন বিষয়ে এখানে আলোচনার বিষয় নয়। অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বরাদ্দ দেয়া হয়। আমরা তাতে কখনো আপত্তি জানাইনি। ইসলামী অনুষ্ঠানকে কেন আড়াল করা হয়েছে, সেটা আমাদের বুঝে আসেনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে এবং আহত হয়েছে তাদের জন্য আমরা দোয়া করি। তারা যে আমাদের জন্য একটা সুযোগ এনে দিয়েছে, তা কোনোভাবেই হারানো যাবে না। "কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্য চলবে না" এ স্লোগান শুধু মুখে নয়, সর্বত্র বাস্তবে পরিণত করতে হবে। তিনি চবি ক্যাম্পাসে একাডেমিক কনফারেন্স, সীরাত মাহফিল ও সুস্থ ধারার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের আহ্বান করেন। তিনি চবির নতুন ভিসিকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে সহায়তাকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রফেসর ড. আতিয়ার বলেন, আমরা সমাজ তৈরী না করে স্টেট তৈরী করতে চেয়েছি। ফলে সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গকে আমরা খুব কম বিবেচনায় নিয়েছি। যেমনটা আজকে যাদেরকে দেখছি, এ মানুষকেগুলোকে আমরা সমাজের মূল ট্রেন্ডের মধ্যে একীভূত করতে পারিনি। কারণ আমরা বিভক্তি তৈরি করে রেখেছিলাম। সমাজকে এগিয়ে নিতে বিভক্তি ছেড়ে ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে হবে।
চবির দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের নিঃশ্বাস। আমাদের দেশে যারা দাড়ি রাখে, টুপি পড়ে, পাঞ্জাবি পড়ে, বোরকা পড়ে, হিজাব পড়ে, তারা আমাদের দেশের নাগরিক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশীল সমাজ সেটা ভুলে গিয়েছিল। ২৪ এর ইতিহাস হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে গড়া ইতিহাস। সেটাকে ভুলে গেলে চলবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চাই না। আমরা সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর অধিকার চাই।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হেদায়েত এ আয়োজনের ব্যাপারে নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটা সাংস্কৃতিক সন্ধার আয়োজন করা হবে আগে সেটা কল্পনা করতে পারিনি। এতদিন শুধু একপাক্ষিক অনুষ্ঠান হয়ে আসছিল, কিন্তু এখন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করেছি এ অনুষ্ঠান। এমন আয়োজন সবসময় হোক।