মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

মেধাবী শব্দটি যেন গালি না হয়

  • জাহাঙ্গীর বাবু
  • ২০২৪-০৯-২১ ১০:১৫:০৩

সবাই মেধাবী নয়,কেউ কেউ মেধাবী হয়।যে মেধা আল্লাহ প্রদত্ত।মেধাবীর চেয়ে মানুষ হওয়া জরুরী।সেই কবে থেকে মানুষের মাঝে মানুষত্ব্য খুঁজি।বিশ্ববিদ্যালয়ে কি মানুষ নেই, শুধুই মেধাবী! তারাতো পরীক্ষায় একের চেয়ে অন্য মেধার শির্ষে থেকে মেধাবী হয়েই পড়তে এসেছে।যারা মেধাবী নয় তারা ঝরে পড়েছে। মেধাবীদের হাতে রিক্ত্রর দাগ।এই দাগ হাত থেকে মুছে গেলেও থাকে মস্তিষ্কে। কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ের আগে তারাই তাদের দাবীর মাধ্যমে জানান দিয়েছে তারা মেধাবী। তারা যখন ভবিষ্যতে
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবে,শিক্ষার গুরু হবে তখন তারা কিভাবে ঘুমাবে।এই নিরপরাদ অথবা ভারসাম্যহীন নিহতদের আত্মাগুলো কি তাদের ঘুমাতে দিবে?নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত সাবেক মেধাবী কর্মকর্তাদের মতো অত্যাচারের ষ্টিম রোলার চালাবে।
প্রতিটি শ্রেণী কক্ষে মেধাবী,ক্লাসে,স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়,থানা,উপজেলা,জেলা,বিভাগ,পুরো দেশে মেধাবীর ক্যাটাগরি কি?
আগে আশির দশকে প্রত্রিকা খুলে বিভাগের টপ বিশ জন,দেশের সের বিশ জনের নাম পড়তাম,ছবি দেখতাম,তাদের স্বপ্ন কি পড়তাম।
নিজে মেধাবী ছিলাম না। এভারেজ একজন ছাত্র।প্রচুর লিখতাম,মুখস্ত হতো না।একই বিষয় প্রশ্নোত্তর লিখে লিখে এমনকি একই অংক বার বার লিখে লিখে আয়ত্বে আসতো। না বুঝেও দেখা যেত লেখার কারনেই মুখস্ত হতো।আমার খুদ্র জ্ঞানে মনে হতো ক্লাসের টপাররাই মেধাবী।স্কুল জীবনে আবু তালিব,টফি,রফিক পনি,কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজের আসলাম,নীপা,মাসুমা,ঢাকা পলিটেকনিকে নিজ সেকশনের শুভ,আরিফরাই আমার কাছে মেধাবী। কারা কারা ডুয়েটে চান্স পেলেন,যমুনা ব্রীজের কাজে,ওয়াসা,রেলেওয়েতে,পল্লী বিদ্যুৎ,ওয়াবদা,রোডস এন্ড হাইওয়েতে,পিডাব্লিউ, হাউজ বিল্ডিং এ কে জব পেয়ে গেলো তারাই আমার কাছে মেধাবী ছিল।
আমার মতো এভারেজ একজন নন মেধাবী জীবনে কাউকে গালিও দিলাম না, ধাক্কাও দিলাম না। কাজেই মন দিলাম।আজো কাজ করেই যাচ্ছি।জীবন চক্রে আরব,ইয়েমেন,মিশর, পাকিস্তান ভারত,মালোশিয়া,চাইনীজ,আয়ারল্যান্ড,সিঙ্গাপুরী,আমেরিকান,
 বাংলাদেশ এর মেধাবীদের সাথে কাজ করলাম।আমার কাছে তারা মেধাবী হলেও তারা অনেকেই স্যার ডাকতো যখন আমি সিনিয়র, আবার আমিও স্যার ডাকি যারা আমার সিনিয়র। কাজটাই প্রধান।
আমি  প্রতি মুহুর্ত ছাত্র এই ধরণীর বুকে। শ্রমিক থেকে উচ্চ পদস্তের কাছে শিখি। যেখানে কারো শিক্ষার অহংকার নেই।হিংসা নেই।শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার সন্মান আছে।
এখন আমাদের দেশে মেধাবীদেরর শিক্ষার মাত্রা পরীক্ষার কম্পিটিশনে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়,প্রাইভেটের বিশ্ববিদ্যালয় এর উপরের তালিকায়,বিশেষ করে ক্যাডার,ননক্যাডারে চান্স পাওয়ায়।যদি ও বিশেষ মেধাবীরা বিদেশে গিয়ে আরো উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ওই দেশেই থেকে যায়।
এতো কিছু লেখার অর্থ হলো, মেধাবীর সংজ্ঞা কি নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চান্স পাওয়া,নির্দিষ্ট কাজে সুযোগ পাওয়া।( প্রশ্ন ফাঁস করা মেধাবীর লিষ্ট কিন্তু ছোট নয়).
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুন খারাবী নতুন নয়। রাজনৈতিক চাটুকারীর কারনে, চাঁদাবাজির ভাগাভাগি,হোষ্টেলে ফ্রি খাওয়া,সিট পাওয়া,নারী ঘটিত,বড় ভাই ছোট ভাই সন্মান অসন্মান,দোকান বাকী,চুরি,বাটপারী,হল দখল নানান কারনে খুন খারাবী আগেও হয়েছে,হচ্ছে হবে। যেখানে উনিশ-বিশ সবাই মেধাবী।
যেই মেধাবীরা একুশের ভাষা আন্দোলন করে রাস্ট্র ভাষা বাংলা, যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে তা এনেছে।
৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বের বুকে নিজস্ব স্বাধীন ভুখন্ডের মানচিত্র এনেছে। লালা সবুজের পতাকা,সবুজ পাসপোর্ট এর স্বাধীনতা দিয়েছে।
৯০ এর গনভ্যত্থানে বিজয় এনেছে দিয়েছে এই মেধাবীরা।জীবন দিয়েছিল নুরহোসেন,ডা:মিলন।
চব্বিশ সালে সকল রাজিনৈতিক দল যখন দীর্ঘ পনের বছরে হিলাতে পারেনি স্বৈরাচারের মসনদ,এক দফার দাবীর অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সকল রাজনৈতিক দল,ছাত্র জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে, প্রায় হজার আত্মাহুতির বিনিময়ে,হাজারো আহতের কষ্টের নদীর উপর বিজয় এনেছে।
মেধাবীরাই এখন আছে সরকারে। কোটা বিরুধী আন্দোলন করে সিলেকশন প্রেসেসে কোটার আদলেই আছে সরকারে।
যাদের বিশ্বাস করে ছোট্ট শিশু তার জমানো টাকা,বৃদ্ধা তার হজ্বের টাকা,পেনশনের টাকা,রিক্সাওয়ালা তার দিনের অর্জন, ভিক্ষুক তার খাবারের টাকা,বধুর কানের দুল,সব মানুষের আমানত তুলে দিয়েছে বন্যার্তের সাহায্যে মেধাবীদের বিশ্বাস করে। পরম আস্থায়,সেই মেধাবীদের দেড়মাসেই একি রুপ,ভাষায় পরিবর্তন! আচরণে পরিবর্তন! অঙ্গভংগিতে পরিবর্তন! চাল চলনে পরিবর্তন। অহংকার ভাব ( সবার নয়)। তারাই যেন গত সরকারের চেয়ে ক্ষমতাধর,ছাত্রের গন্ধ গায়ে থাকতেই প্রশাসনের নিয়োগ থেকে সব আয়োজনের কারিগর!( পত্র পত্রিকা টকশোর ভিত্তিতে জানা)
এই লেখার দুদিন আগে ভারসাম্যহীন এক ব্যাক্তিকে যে ভাবে পিটিয়ে হত্যা করলো তাতে মেধাবী শব্দটা যেন গালিতে রুপান্তর হচ্ছে। টিভি,সোশ্যাল মিডিয়া পত্রিকায় এতদিন ছিলো মেধাবীদের গুনগান,তাদের নিয়ে বৈষম্যহীন দেশের স্বপ্নটা যেন চট করে হারিয়ে না যায়!এই আশা আমার মতো মেধাহীনের। 
মেধা সম্পন্ন আমাদের জেন জি আমাদের আগামীর সুন্দর শান্তির বাংলাদেশের স্বপ্ন নয় বাস্তব রুপ দেখাবে এটাই প্রত্যাশা। যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিরোধ তবে আইন হাতে তুলে নিয়ে নয়,নীরিহের উপর আঘাত নয়,সত্য ন্যায়ের পথেই থাক জেন জি।না হলে মেধাবী জেন জির "মেধাবী"  শব্দ গুলো গালিতেই পরিনত হবে।

 


এ জাতীয় আরো খবর