কি করে ঘরে ফিরি, আকন্ঠ জোছনায় ভিজি
রাতভর ঘুমঘোরে তারাদের গল্প শুনি?
প্লেট ভরা রক্তমাখা ভাত
আমাকে গিলতে বলো?
বলবেই তো, অবিরাম যাচ্ছ বলে -,
রক্তভূক নামটাও দিতে পার
রক্তের নদীতে দাঁড়িয়ে - হৃদপিণ্ডের সবটুকু
ঢেলে দেয়া সন্তানের হিসেবটাও জানিনা আমি।
এখনো হিসেব দাওনি
কত শত চোখ দৃষ্টি হাারাল
দুই পা হারিয়ে পঙ্গু হলো সে
কত না তরুণ, নাক্ষত্রিক তাজা প্রাণ।
আদর জড়ানো প্রিয় হাত দুটির
একটিও নেই আর
কত তরুণ যুবার মহিমা সুবাস দেহে,
অথবা একটা হাত নিয়েই রুক্ষ পৃথিবী পেরোবে
জ্বলন্ত সূর্যের মত নাক্ষত্রিক তরুণেরা
এখন অপূর্ন মানবের দলে চির দুঃখী সব
আকাশ নীলের তারা।
ওরা আন্দোলনে ছিল, মিছিলের সম্মুখ সারি
এখন পঙ্গু, এখন অন্ধ, এখন যুদ্ধাহত
ওরা কত জন- কত শত --?
আমাকে হিসেব দাও, সংখ্যাটা বলো
পৃথিবীকে জানাও সত্যিকারের নির্ভূল সংখ্যাটা
ব্যথার আর্তনাদে কোথায় কাঁদছে ওরা
কতদুর? দগদগে ক্ষত নিয়ে গোঙানির আওয়াজটা কতজনের
কোন চিকিৎসালয়ে -,
কতটা বাসভূম যুদ্ধ শেষের
কাটা ছেঁড়া সন্তান কোলে বাকরুদ্ধ চেয়ে আছে,
গুনে গুনে হিসেব নেব সবটার।
খোঁজ নাও মহারাজ,
নির্ভূল হিসেবটা আমাকে জানাও মহাজন।
আমার চেনা চাঁদ চুয়ে পড়ে রক্তের ফোঁটা
দেয়ালে ফুলদানিতে পানির গ্লাসে
উপচানো রক্তস্রোত।
বলো, গুনে গুনে নিখাদ হিসেবে বলো
কতটা জীবন বলিদান , কতগুলো প্রাণ
নিঃশেষে দান, জন্মভূমির মুক্তিকাম্যে
অবিরাম অবিরত।
সত্যিকারের গনকবরের তথ্যটাও জানাও
চিহ্ন খোঁজ - খুব মনোযোগে- সযতনে।
সবার হিসাব জানাও।নাম ধাম ঠিকানাও।
মোট শহীদের সংখ্যা
মোট নিখোঁজের সংখ্যা
মোট আহতের সংখ্যা
চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়েছে যারা,
হাত পা হারিয়ে নীরব শোকে
ঘরে ফিরে গেছে যারা।
আমার প্রিয় বাংলাদেশ কাঁদছে
সেই থেকে ভাবছে--
প্রকৃত হিসেবটা
আরো৷ অনেক,অনেক বেশি হবে
কেন অগোচরে চিহ্ন হারাবে
দেশপ্রেমী এই নাম?
আমাকে জানতে দাও
শহীদ আর যুদ্ধাহতের সংখ্যা,
নিখোঁজের হিসাবটাও
একে একে সবার নাম বলো
আমার জপমালায় গেঁথে নেব
সেই নাম জপে জপে পৃথিবীর প্রহর ভরাব
নিমেষ গড়াবে শ্রাবন ফাগুন শারদের,
ক্লান্ত পৃথিবীর দিনে, উচ্চারণের মহিমায়
নতুন সূর্য ওঠাবে জাগ্রত দাবানলে।
সত্যিকারের ইতিহাস, হিসাব জানতে চেয়ে
বড় বেশি অসহায় আমার দেশ,
আকুল হয়ে কাঁদছে দেখো
দুচোখের অশ্রু সাগরে রক্তস্রোতী ধারা
অবিরাম অবিরত।