মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

ধরা থেকে খাওয়া পৌনে দুই ঘন্টা

  • জাহাঙ্গীর বাবু
  • ২০২৪-০৮-১৪ ১২:২৫:৪৮

অনেকদিন কোন পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ফুরসত হয়না।কারণ অনেক।ব্যাস্ততাও অনেক।দেশে থেকে অনলাইন বিদেশের মানে আমেরিকা,হংকং,ইন্ডিয়া,ঢাকার তদারকিতে কাজ করা চাট্টিখানি কথা নয়।আমার বর্তমান প্রজেক্ট,মিরেরস্বরাই ইকোনমিক জোন, ইছাখালী,বড়তাকিয়া,কোলগেট টুথপেষ্ট ফ্যাক্টরির কনস্ট্রাকশন এর কাজ।সবে শুরু বছর দুয়েক এই চট্টগ্রামেই থাকতে হবে।
১৩ আগষ্ট দুইহাজার চব্বিশ,ঘড়ির কাঁটায় দুপুর পৌনে দুইটা। পুরো সাইট খালি করে সবাই লাঞ্চে। আমি আমার সাইট অফিসে তিন সহকর্মী প্রকৌশলী, সাইট সিকিউরিটি একটা জাল নিয়ে এলো বি বি এল ইঞ্জিনিয়ার পারাবী সাথে। আমার ড্রাইভার কিন্তু খুব সুন্দর ঝাঁকি জাল মারতে পারে। যা ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি।সে এখানকার মিঠাছড়া এলাকার। এর মাঝে সবচেয়ে বয়সে কম ইঞ্জিনিয়ার রেহান ই এইচ এস অফিসার।তাও থার্টি প্লাস। একটা জাল নিয়ে এলো যার ৯৯ শতাংশ ছেড়া। রেহান তাই নিয়ে হাজির। মারলো জাল খুলল না, দ্বীতিয়বার একটা ছোট্ট তেলাপিয়া। এখানে এর আগেও বানে ভাসা তেলাপিয়া পাওয়া গেছে। আরো দুই বারে একটা।  আমার আর তর সইলো না। ইঞ্জিয়ার আহাদের কাছে মোবাইল চশমা দিয়ে নামলাম হিডেন গর্তে পড়ে মনে  হলো মানি ব্যাগ পকেটে। তাড়াতাড়ি উঠতে উঠতে ভিজে গেলো সব। যাক দুই জন মিলে জাল টানলাম। ছেড়া জালে আরো একটা ছোট তেলাপিয়া উঠল।এর পর আর উঠলো না। এবার ড্রাইভার নাসির আসার পর খুব সুন্দর গোলাকার জাল মারলেও ছেঁড়ার কারনে আরো দুটো পর্যন্ত মাছে হিসেব শেষ। রেহান আরো কিছুক্ষণ চেষ্টা অব্যাহত রাখলো।গড়ির কাঁটা আড়াইটা।গাড়ি ছুটলো বাসায় একুশ কিলোর মাঝে মিরের স্বারাউ নেমে গেলো ইঞ্জিনিয়ার  আহাদ আর ইঞ্জিনিয়ার কাদের।
বাসায় এসেই কিচেনে গিয়ে কেটে ফ্রাই করে একটা বেগুন,তিনটা টমেটো, পেয়াজ রসুন কাঁচামরিচ দিয়ে একটা কিছু ভুনা টাইপের করলাম। এর মাঝে রেহান ভাত নামাল চুলা থেকে। সালাদ,আগের তরকারী এর তাজা ফ্রেস ফ্রাই উইথ ভুনা সবজি। নামাজ পড়ে যখন খেতে বসলাম তখন ঘড়ির কাঁটায় তিনটা ত্রিশ।
আমি ছোট বেলায় মায়ের কাজে সাহায্য করতাম।স্পেশালি মা যেদিন নোয়াখালী থেকে আড়িখোলা যেতেন, ফেনী স্টেশন থেকে ফোন করতেন সকাল ১১টায় আড়িখোলা স্টেশনে।সন্ধ্যায় বা রাতে পৌছতেন ছোট ভাই বোন আর ছোট মামা নয়তো আব্বা,নয়তো নানা,বা অন্য আত্মীয়ের সাথে।আমি ডাল,ভাত,আর আলু ভর্তা করে রাখতাম।গাড়ি থেকে নেমেই আট দশ জন পেট ভরে খেতে পারতো। 
একবার গরু গোশত রান্না করতে আব্বা আমায় বলে ছিল ঝিরা বাটতে।আমি বাটা শুরু করে শেষ পর্যন্ত সব পাটার সাথে মিশে গিয়েছিল।  ছাত্র জীবনে টুক টাক ভাজি করতাম জহির রায়হান হোষ্টেলে থাকতে ঢাকা পলিটেকনিক এর হোষ্টেল,৯৩,৯৪ সালে। লিটনের স্বাদ লাগতো না।ও কখনো নিজে থেকে কিছু না করলেও আমার রান্নার পর গরম তেলে ঝিরা ভিজে বাগার দিতো।
আমার চাকরী জীবনে আব্বা আসলেন একদিন,দেখলেন রান্না করে খাই। তিনি দেখিয়ে দিলেন কিভাবে রাঁধতে হয়।সেই একই নিয়মে রান্না করি,বিদেশ জীবনেও বিভিন্ন সময়ে রাঁধতে হয়েছে।আজ এই পড়ন্ত বয়সে বাবুর্চি না পেয়ে হাত পুড়িয়ে খেতে হয়। বাবুর্চি এক জন এনেছিলাম এই এলাকার পনের হাজার চেয়েছিল। কোম্পানী খরচ না দিলে আমার দ্বারা এই হাতি পোষা মুশকিল। 
আমার সাথে ইঞ্জিনিয়ার রেহান থাকে, ও ফাস্টফুড খাওয়া, অনলাইনে অর্ডার করে ছাত্র জীবন পার করা।রান্না না জানলে ভালো ভাত রান্না,ডিম ভাজিতে পাকা এখন,কুটি কাটি,আর ধোয়ার কাজ ভালই করে। খেতে ভীষণ ভালোবাসে। বিভিন্ন হোটেলে ওর জন্য বেশি যাওয়া হয়। 
আব্বার শেখানো একটা রান্নার রেসিপি দিয়ে জীবন পার করে দিলাম।আমার আব্বা বাজার থেকে কিছু নিয়ে আসলে সেই বেলয় তাজা খেতে ভালোবাসতেন।  আমিও তাই চাই
মজার ব্যাপার আজকের এই লেখা পর্যন্ত আমার বেগম সাহেবাকে আমার নিজ হাতে রান্না করে কিছুই খাওয়ানো হয়নি।মেয়েদের রান্না করে খাইয়েছি। তাই ফেইস বুকে পোষ্ট দেখে বলে এইবার আর ছাড়বেনা। তাকে রেঁধে খাওয়াতে হবে। বাড়ি গেলে সে সব কাজ নিজ হাতেই করে।আমাকে কিছুই করতে দেয় না এই তেইশ বছর ধরে। তবে চায় তার পাশে যেন থাকি, দাঁড়াই,ও রান্না করবে আমি পাশে থেকে গল্প করি। শুয়ে থাকলে মাঝে ডিস্টার্ব করে এটা ওটা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসে।
আমি কয়েকজনের কথা শুনলাম,ওদের বাচ্চা ছোট,তাই বউকে কাজ করতে দেয় না। হোটেলে গিয়েই ভালো খাবার খায়, সকালে খালি পেটে বের হয় ব্যাচেলর দের মতো। কারন বেবি ছোট। আর আমার দাদী, মা,আর বউ সেই ফজরের সময় ঘর থেকে বের হলে হালকা নাস্তা করিয়ে সাথে পথে খাওয়ার জন্য রুটি বা পারটা দিয়ে দিত। আজকাল ছেলেরা হাদিস মানে।বলে নারিদের কষ্ট দিতে নেই। বাবা মায়ের প্রতি ছেলের কর্তব্য ছেলের বউয়ের নয়। আমার পরের জেনারেশন আসলে পুরুষ।আমার বাবা আর আমার জেনারেশন বউদের ভীষণ কষ্ট দিয়েছি। রেষ্টুরেন্ট লাইফ দিতে পারিনি।

সাইট ম্যানাজার
কোলগেট পালমোলাইভ এ সি আই বাংলাদেশ লি:


এ জাতীয় আরো খবর