চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে- একটি বহুল পরিচিত নাম, সুপরিচিত মুখ, জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব । বাংলাদেশের সকল মানুষই তাঁকে, তারকাখ্যাতি সম্পন্ন চিত্রনায়ক ও একজন সাদা মনের সমাজ সেবক হিসেবে চিনেন, জানেন।
এই সুবিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ইলিয়াস কাঞ্চন এক সময় ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সর্বাধিক জনপ্রিয় চিত্রনায়ক। দেশের সবচেয়ে বাণিজ্যসফল চলচ্চিত্র 'বেদের মেয়ে জোসনা'র সফল নায়ক তিনি।
বহু বাণিজ্যসফল ছবি উপহার দিয়ে চলচ্চিত্রশিল্প তথা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে করেছেন সমৃদ্ধ।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার'সহ বিভিন্ন সংঠনের পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন বহুবার।
"সামাজিক বা রাজনৈতিক 'কমিটমেন্ট' ছাড়া কোন শিল্পী বা শিল্প পূর্নাঙ্গ হতে পারে না"- এই নীতিকে অনুসরণ করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এক সময় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সমাজ সেবায় ব্রতী হন। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে একমাত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনই, একটি সুনির্দিষ্ট সামাজিক প্রত্যয় নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন।
এ দেশের সড়ক পথে নিয়ম না মানার ব্যাধির বিরুদ্ধে, মানুষের সচেতনতা গড়ে তুলতে, সড়কের অপঘাত থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের প্রচেষ্টায়- চলচ্চিত্রের আলো ঝলমলে আঙিনা ছেড়ে, নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছেড়ে "নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)" নামের সংগঠনের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩১ বছরধরে কাজ করে যাচ্ছেন।
সারা বাংলাদেশের জেলা-উপজেলা, এমন কি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে "নিরাপদ সড়ক চাই" সংগঠনটির শাখা। দেশে-বিদেশে প্রায় ১২০ টি শাখাসংগঠনের মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বাধীন "নিরাপদ সড়ক চাই" সংগঠনটি জনমানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
বাংলাদেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে, অহেতুক সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দিনরাত এক করে, নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে, হাজার হাজার মাইল চষে বেড়িয়েছেন, প্রাণ রক্ষার একটি আন্দোলন নিয়ে- জনসচেতনতায় কাজ করে যাচ্ছেন । তাঁর উপার্জিত অর্থ, তাঁর ব্রত, তাঁর সুখ-দুখ, তাঁর স্বপ্ন-সাধনা, তাঁর ত্যাগ, তাঁর মেধা ও শ্রম সবই বিনিয়োগ করেছেন তিনি বাংলাদেশের সড়কপথ নিরাপদ করতে।
ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনারোধে ও দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ণে ভূমিকা রাখা এবং বেকারত্ব নিরসনে শিক্ষিত গাড়ি চালক তৈরি করে সামাজিক নিরাপত্তায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান 'একুশে পদক'-এ ভূষিত করে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে।
ইলিয়াস কাঞ্চন সম্পর্কে এতোগুলো কথা বলার কারণ হলো- দেশের বিশৃঙ্খল সড়ক ও পরিবহণ ব্যবস্থাকে সংস্কার করে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে হলে, সড়ক যোদ্ধা ও সড়কে শান্তির দূত হিসেবে খ্যাত ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমাদের খুবই প্রয়োজন বলে মনে করি।
বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের এই সুসময়ে, গণমানুষের কাঙখিত সর্বোচ্চ আস্থাভাজন ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে (সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে) নিয়োগ দেয়ার আবেদন করছি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়ীত্ব পালনে এই সময়ে অভিজ্ঞ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিই হলেন জনাব ইলিয়াস কাঞ্চন।
ব্যক্তিজীবনে অত্যান্ত সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক, নীতিবান ও এক মহৎপ্রাণ সাদা মনের ভালো মানুষ হিসেবে এদেশের সকল মানুষের কাছে সুপরিচিত তিনি ।
অতএব আমরা বিশ্বাস করি এবং দেশের সকল মানুষও যাঁর উপর আস্থাশীল সেই সড়কযোদ্ধা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে উপদেষ্টা করে দায়ীত্ব দিলে, তিনি তাঁর ৩১ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এই সেক্টরকে সংস্কার করে শৃঙ্খলার মধ্যে এনে দেশবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি ।
লেখক- চলচ্চিত্রসংসদকর্মী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী