শহর থেকে গেছি অনেক দূরে
আমি, তুমি, সে, আরও অনেকে।
সেদিন ছিল আষাঢ়ের পূর্নিমা,
সমুদ্রতীরে চাঁদের মায়াবী আলো আর
দূরন্ত ঢেউয়ের ওঠা পড়া।
তুমি যথারিতি ব্যস্ত তোমার বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে,
আমি বালুকাবেলার একধারে বসে জোৎস্না ভরা রাতটাকে উপভোগ করছিলাম।
এমন সুন্দর রাত, সামনে উত্তাল সমুদ্র,
আকাশভরা চাঁদের আলো----,
তবু যেন নিজেকে খুব একলা আর নিশ্ব মনে হচ্ছিল।
হঠাৎ সে পাশে এসে বসল ---,
বলল ---কি একা একা?
এই সমুদ্র দেখছি ;
আমি বললাম দেখুন --
ওই দূরে ছোট্ট নৌকাটা কেমন ঢেউয়ের ধাক্কায় টাল খাচ্ছে ---;
সে বলল যদি ঝড় ওঠে নৌকাটা হয়তো তলিয়ে যাবে,
তবু সওয়ারিরা নৌকা বেয়ে এগিয়ে চলেছে,
পড়ে কি হবে ভেবে আজকের যাত্রাটি থামিয়ে দেয়নি --;
আমি বললাম সত্যি কথা--
সে বলল জানো তিথি--,
আমাদের জীবনও কিন্তু এই সমুদ্রের মতন--,
অনবরত ওঠাপড়া, তারি মাঝে আমরা সবাই
আমাদের জীবনের তরীটাকে বেয়ে নিয়ে চলি থেমে যাইনা---;
আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম তার কথা--
সে বলল ---
জীবনের একটা পার ভেঙে গেলে অন্য পারটা ঠিক গড়ে ওঠে।
তারপর আমাদের এই সফরটায় তুমি যখন অন্য জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে, আমরা দুজনে তখন
অনেক কাছে এসে গিয়েছিলাম, তুমি জানতে পারোনি বা জানতে চাওনি।
আমরা ভেসে চলেছিলাম এক অন্য স্রোতে,
যে স্রোতে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া আমিকে খুজে পেলাম।
তার উৎসাহে আমি লিখতে আরম্ভ করি, নতুন করে গান গাইতে আরম্ভ করি।
এখন আমি লেখিকা বলে বেশ নাম করেছি
অনেক সভায় যাওয়া আসা করি,
সেও তার জীবন নিয়ে ব্যস্ত;
অনেকদিন পর একটা সাহিত্যসভায় তার সাথে আমার দেখা হল ---,
সে এগিয়ে এল আমায় দেখে---
বলল---
কত গল্পতো লিখলে--
আমাদের গল্পটা লিখবেনা?
দুটি নদী শুধুই বয়ে গেল,
মোহনায় মিলে গেলনা--
আমি বললাম--
এবার লিখব--।
তারপর----?
আবার যে যার পথে---,
আজও পূর্নিমা --
আকাশে গোল চাঁদটা তাকিয়ে আছে--,
আমরা চলেছি যে যার পথের দিকে।।