বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনা আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে একই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অফিস সহকারী মৃত্যু আবু তাহের এর স্ত্রী । ভুক্তভোগী ওই নারী বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ কে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। (৫ জুলাই,) শনিবার বিকালে বরগুনা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ বশির উদ্দিন এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান। তিনি আরো জানান, তদন্ত চলমান।
মামলা নম্বর (বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পিটিশন মামলা নং-১৩৯/২০২৪। ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ , সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১)।
মামলার বিবরণে অভিযোগ করা হয় আসামি মজিবর রহমান আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি করে। ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী মৃত আবু তাহেরও একই বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী জীবিত থাকতে ব্রেন স্টক জনিত অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন। প্রধান শিক্ষক মজিবর অফিস সহকারী আবু তাহেরকে এ সময় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং বলেন যে তুমি ডিউটি করতে না পারলে তোমার স্ত্রীকে দিয়ে ডিউটি করাও। অসুস্থ অফিস সহকারী স্বামীর অনুমতি নিয়ে ওই ভুক্তভোগী নারী ২০১৯ সাল থেকে বিদ্যালয়ে স্বামীর পদে দায়িত্ব পালন করে আসিতে থাকে। অসুস্থ স্বামীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ওই নারীকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কু প্রস্তাব দিতে থাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর । এরই মধ্যে ২০২১ সালে তার অফিস সহকারী স্বামী মৃতবরণ করেন । এ সুযোগে কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় প্রধান শিক্ষক মজিবর তার ব্যক্তিগত রেস্টরুমে নিয়ে ওই ভুক্তভোগী নারীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করতেন। মানসম্মান ও চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার হুমকির ভয়ে ভুক্তভোগী নারী মুখ বুজে সহ্য করে আসিতে থাকে । মামলার বিবরণে আরো উল্লেখ করা হয়, বিগত ২০২৩ সালের ১৩ আগষ্ট কাজ আছে বলে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা আল- মদিনা আবাসিক হোটেলে নিয়ে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ভুক্তভোগী নারীকে একাধিক বার ধর্ষণ করে প্রধান শিক্ষক মজিবর এবং হোটেলের রেজিষ্ট্রারে স্বামী -স্ত্রী পরিচয়ে মজিবর নিজ স্ত্রীর হেনা আক্তার নামে ভুক্তভোগী নারীকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেয় । পরে ভুক্তভোগী নারী বিবাহ করার কথা বলিলে কিছু দিন পর নতুন কাবিন করিবে বলে আশ্বস্ত করে প্রধান শিক্ষক মজিবর। অপরদিকে এ বছরের ১৫ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে আঠারো গাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলায় ব্যক্তিগত রেস্টরুমে নিয়ে ওই নারীকে নিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করে মামলার আসামি প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান। পরে ২৫ জানুয়ারী ওই ভুক্তভোগী নারী বিবাহের জন্য কাবিননামা চাইলে প্রধান শিক্ষক মজিবর কাবিন নামা দিতে অস্বীকার করে এবং বিবাহ করা ও কাবিন নামা দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানায় । যাহা কিছু হয়েছে তা ভুলে যাও বলিয়া হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয় ওই ভুক্তভোগী নারীকে। লোকলজ্জার ভয়ে কিছু দিন নিরব থেকে থানা কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ওই ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে এ বছরের ৩০ শে মার্চ বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আমতলী আঠারো গাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মুঠোফোনে প্রতিবেদকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা কোট চলমান ও তদন্তাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার কারণ কি জানতে চাইলে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেয়।
বাদীর আইনজীবী মোঃ মারুফ হোসাইনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বরগুনা আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন অফিস সহকারী মৃত্যু আবু তাহের এর স্ত্রী । বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ কে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।