সোমবার, জানুয়ারী ১৩, ২০২৫

পা র মি তা চ্যা টা র্জি

  • সহমর্মিতা
  • ২০২৪-০৬-১৪ ০২:৫৪:৫৩

দিশা গিয়েছিল একটা কবি  সভায়, তার স্বরচিত  কবিতা বলবার ছিল,  অডিটোরিয়াম  আধো  অন্ধকারে সে ঢুকছে সঙ্গে তার আরও দুজন কবি বন্ধু  আর বাচিক শিল্পী বন্ধু ছিল ।  তাকে সামনের দিকে বসাবার জন্য  নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,  হঠাৎ  একদম ধারের একটা সিট থেকে রোগা  পাতলা ছোটখাটো চেহারার একটু খুব মিষ্টি মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে  বলল, দিদিভাই তুমি? 
হ্যাঁ  আমি  দিশা চ্যাটার্জি , 
মেয়েটি একমুখ হেসে বলল, জানি তো, আমি তোমার লেখার খুব ভক্ত, তোমার লেখা পড়ে কোথায় যেন নিজের সাথে খুব মিল খুঁজে  পাই, তুমি আসছ শুনেই  আমি ধারে এসে বসেছিলাম যাতে তোমার সাথে কথা বলতে পারি, 
দিশা খুব খুশি হল, সে কিছুই এমন লেখক নয় যে তার সাথে কেউ কথা বলবার জন্য এভাবে অপেক্ষা করবে, মেয়েটির মুখটি খুব মায়াবী  আর ভিষণ মিষ্টি।  দিশারও যেন মনে হল মেয়েটি তার চেনা,  সে তাই জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আগে আমাকে দেখছ?  চেনো আমাকে?  
হ্যাঁ চিনি তো বটেই তবে দেখলাম আজকেই প্রথম। 
মেয়েটির পাশে একটা সিট খালি দেখে দিশা  বলল, আমি তোমার পাশেই বসি, সামনের থেকে ভলেন্টিয়ার তাকে ডাকছে, দিদি আপনি সামনে আসুন, 
দিশা তাদের বলল, ঠিক আছে আমি এখানেই বসছি, 
তারা বলল, কিন্তু আপনাকেে যে সামনে বসাতে বলেছে, 
কিছু হবেনা, আমি এখানেই বসছি, ওর সাথেই বসছি, অগত্যা ভলেন্টিয়ার চলে গেল অন্য দুজন কে নিয়ে। দিশার মনে হল ওর চেহারাটা খুব  চেনা লাগছে কেন?  এরকম রোগা ফর্সা, মুখের  গরণটাও একরকম, স্বভাবটাও লাজুক লাজুক, হঠাৎ  দিশার মনে হল, এ তো তারই প্রতিচ্ছবি, এ যেন সেই ওই বয়েসে সে যেমন ছিল ঠিক তেমন, আবার বলছে আমার লেখার সাথে নিজের জীবনের মিল পায়, এ কি সত্যি হয়!  এত মিল দুটি সত্ত্বার মধ্যে। 
দুজনে পাশাপাশি বসার পর মেয়েটি বলল, দিদিভাই আমার নাম অনুমিতা, জানো দিদিভাই তোমার একটা লেখা আছে না, " সেদিন ছিল পঁচিশে বৈশাখ " গল্পটা পড়ে না আমার চোখ দিয়ে জল এসে গিয়েছিল, ঠিক এইরকম একটা ঘটনা আমার জীবনে হয়েছিল, আমি সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার সাথে দেখা করার জন্য,  আর আজ দেখা হয়ে গেল, এরপর দিশার নাম ডাকা হচ্ছে, কবি দিশা চ্যাটার্জি  সামনে এসে বসুন,  দিশার চোখেও জল এসে গেল এখনও সমাজে কত অনুমিতা দিশা আছে যাদের অসম্মান বহন করে চলতে হয়, এও হয়ত আর একজন দিশা। 
দিশা এগিয়ে গেল তার কবিতার বলার সময় এসে গেছে, দিশাও আসার সময় তার স্বামী বলেছিল এ কোথাকার কি কবিসভা?
দিশা বলেছিল নাম করা লোকেরাই আয়োজন করেছে, ভালই হবে। 
নামকরা লোকেরা তোমাকে ডেকেছে ?  হাসালে? 
 হঠাৎ  দিশা কে এত রেগে গেল, তাকে রেগে যেতে দেখে থতমত খেয়ে বলল, আরে আমি ঠাট্টা করছিলাম,  
না, সবসময় অপমানজনক কথা বলে ঠাট্টা করবেনা আর আমার আসতে দেরি হবে রুটি চিকেন করা আছে খেতে হয় তো খেও, 
বলেছিল আমি যখন খাব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তো!  
মাইক্রোওয়েভ আছে গরম করে নিও। মোটমাট আমার আসতে দেরি হবে।
কবিতা বলে ফিরে আসার পর  অনুমিতাকে দিশা বলল,চল চা খেয়ে আসি, 
অনুমিতা বলল, চল দিদিভাই, ওর হাতটা চেপে ধরে অনুমিতা বলল,, আজ যে আমার কি আনন্দ হচ্ছে, আমার প্রাণের দিভাইয়ের সাথে আমার দেখা হল, দিশা এক হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে নিয়ে বলল, আসলে আমরা একই পথের পথিক, তাই দু'জনে দুজনকে চিনে নিয়েছি, তোমার ও জীবনে ওরকম ঘটনা আছে দিভাই? হ্যাঁ  আছে তো, আছে বলেই গল্পটা, এইজন্যই তুমি আমাকে খুঁজছিলে, আসলে কি বলত?  কটা মেয়ে তাদের স্বামীর কাছে সম্মান পায় ?  যারা পায় তারা আরও চায়, আর যারা কিছুই পায়না অপমান  ছাড়া তারা তোমার আমার মতন বন্ধু বা দিদি খোঁজে একটু সহমর্মিতার জন্য।

 


এ জাতীয় আরো খবর