নিজাম-উল হক।গণসংগীত শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা ও চলচ্চিত্রপরিচালক । বহুগুণে গুণান্বিত ছিলেন এই অসাধরণ মেধাবী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আমাদের ভাষা আন্দোলনে ও শিল্প-সংস্কৃতিতে অনন্য আবদান রাখা এই গুণী মানুষটির আজ মৃত্যুবার্ষিকী । তিনি ২০০২ সালের ৩ জুন, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। এই গুণীজনের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
নিজাম-উল হক ১৯৩১ সালের ২৫ জুলাই, নোয়াখালী জেলার ছাগল নাইয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
নিজাম-উল হক আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের স্বপক্ষে সভা-সমাবেশে গণসংগীত পরিবেশন করতেন। ভাষা আন্দোলনে তাঁর গান ও সুর ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। বিশেষ করে তাঁর সুর করা- “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়”, বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল লতিফ-এর লেখা এই গানটি সে সময় ব্যাপক আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের ঘটনা সারা দেশকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পর, তা নিয়ে প্রথম গান লিখেন ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক। ‘ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’ এই গানটিতে সুরারোপ করেছিলেন নিজাম-উল হক। (উল্লেখ্য যে, ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক, নিজাম-উল হকে এর বড় ভাই)। অমর একুশের সূচনাপর্বের গান হিসেবে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই গানটি। ১৯৫৩-৫৪-৫৫ সালে এই গানটি গেয়ে প্রভাতফেরি করা হতো। তাঁর লেখা ও সুর করা আরেকটি গান- 'রিকশাওয়ালা বলে কারে তুমি আজ ঘৃণা কর..' এই গানটি তখনকার সময়ে শ্রমজীবী মানুষদের আন্দোলনে ব্যাপক জোয়ার এনেছিল। এই গানটির কন্ঠশিল্পী খন্দকার ফারুক আহমদ।
নিজাম-উল হক পরবর্তিতে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘হামদাম’ (উর্দু) ১৯৬৭ সালে করাচীতে মুক্তি পায়। এরপর তিনি ঢাকায় নির্মাণ করেন ‘কোথায় যেন দেখেছি’ (১৯৭০) ও ‘যৌতুক’ (১৯৭৯) নামে আরো দুটি চলচ্চিত্র। 'ববিতা' নামে শুরু করা ছবিটি পরে ‘যৌতুক’ নামে মুক্তি পায়।
নিজাম-উল হক একজন অভিনেতাও বটে। জহির রায়হান পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
চিত্রপরিচালক, গণসংগীত শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক, নৃত্যশিল্পী ও অভিনেতা নিজাম-উল হক। বহুগুণে গুণান্বিত, অসাধরণ মেধাবী সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে তাঁর আবদান অনস্বীকার্য।