গ্রামের এককোনে ছোট্ট একটা ঘরে করিম চাচা চাচীকে নিয়ে অনেক বছর ধরে বাস করে।
ছেলেপুলেও নাই যে তাদের দেখাশুনা করবে।
ঘরের কাছেই একটুকরো আবাদী জমিতে চাষবাস করে কোনরকমে সারাবছর খেয়ে না খেয়ে কাটিয়ে দেয়। লোকালয় থেকে একটু দূরে হওয়ায় গ্রামের লোকজনও তাদের নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না।
তা একদল ছেলেপেলে ঐদিন বুইড়ার বাড়ীর পাশ দিয়া যাওয়ার সময় বুড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে এগিয়ে গেল,
"কি হয়েছে চাচী? এত চেচাচ্ছ কেন?"
বুড়ি আরো দ্বিগুন গতিতে,
"চিল্লাইতাছি কী সাধে!
পোড়া কপাল আমার!
যে চৌকিটাতে ঘুমাই তিন বছর ধইরা সেইটার দুইটা পায়া ভাঙা।
কোনরকমে ইট দিয়া সামাল দিয়া রাখছি।
মাঝখানের তক্তাগুলাইনও ফাঁক হইয়া গেছে।
তোষক থাকলেও একটা কথা আছিল।
এইবার যদি না সারায় তাইলে এই শীতে মাটিতে শোয়া লাগবো।
এই বয়সে কী এত ঠান্ডা সহ্য করার উপায় আছে। মানুষটারে এত কইরা কইতাছি তবুও তার কানে যায়না।"
ছেলেরা ঘরে ঢুকে দেখে সত্যিই খুব খারাপ অবস্থা। বুড়াকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে,
"সামর্থ্য থাকলে তো কবেই সারাই ফেলতাম।
এই শীতটা যাক কোনমতে।
দেখি সামনের শীতের আগে টাকার যোগার করতে পারি কিনা।"
ছেলেগুলো আর কিছু না বলে গ্রামের লোকজনের থেকে দশটাকা করে চাদা তুলে হাজার টাকা তুলে ফেললো।
পরের দিন সকালবেলা বুড়ার হাতে টাকাটা দিয়ে বললো,
"নাস্তা সেরে গঞ্জে চলে যাও।
এইটাকা দিয়ে শক্তপোক্ত একটা চৌকি কিনে তোষক বানিয়ে তারপর বাড়ী ফিরবা।
আশা করি এটা দিয়া যাওয়া আসার ভাড়াও হইয়া যাইবো।"
বুড়া হা কইরা চেয়ে রইলো।
কেমন চৌকি কিনেছে সেটা দেখার জন্য সন্ধ্যাবেলা সবাই করিম চাচার বাড়ীর দিকে রওনা হলো।
বাড়ীর কাছে যেতেই ভায়োলিনের সূর ভেসে আসলো সবার কানে।
একই সাথে চাচীর চিৎকার।
বাড়ীতে ঢুকে দেখে করিম চাচা ভায়োলিন বাজাচ্ছে। ওদেরকে দেখে খুব হাসিখুশি মুখে বলে ফেললো,
"হাজার টাকায় এত সুন্দর জিনিসটা হাতে পেয়ে আর ফেলে আসতে পারলাম না।"