চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপ্ইানবাবগঞ্জে চলছে আমগাছ পরিচর্যা ও বোরো রোপণ কাজ। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রথম বৃষ্টিপাত হয়েছে । শুক্রবার(২৩ ফেব্রæয়ারী) ও গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রæয়ারী) দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত বুধবার(২১ ফেব্রæয়ারী) বিকালে সামাণ্য বৃষ্টি হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় জেলায় গড়ে ৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭,শিবগঞ্জে ৮,নাচোলে ৫ ও ভোলাহাট উপজেলায় ৭মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। গোমস্তাপুরে তেমন বৃষ্টি হয় নি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় জেলায় গড়ে ৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এর মধ্যে সদরে ২, শিবগঞ্জে ৩,নাচোলে ৫ ও ভোলাহাট ্উপজেলায় ৬ মি.মি বৃষ্টি হয়। ওইদিনও গোমস্তাপুরে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। এ হিসাব কার হয়েছে গড়ে। স্থানভেদে জেলার কোথাও বেশি আবার কোথাও প্রায় নগণ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফাল্গুনের বৃষ্টি প্রায় সব ফসলের জন্য ক্ষতিকারক ধরা হলেও এবার জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল আমের মুকুল দেরিতে ফুটছে (স্থানীয় ভাষায় নামলা) বিবেচনায় ও বোরো ধান রোপণ চলমান থাকায় এই বৃষ্টি বড় ক্ষতির কারণ হবে না বলে কৃষি দপ্তর সূত্র জানিয়েছে। কৃষকরাও তেমন আশা করছেন। বরং সংশ্লিস্টদের ধারণা, এই বৃষ্টি আম,ধানসহ মাঠে থাকা সকল ফসলের জন্য উপকার বয়ে আনবে। তবে কোন ক্ষেত্রে কিছু ক্ষতি হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার জেলায় আম চাষ হচ্ছে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে। যা গত মৌসুমে ছিল ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে বলে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর। আমচাষীরা এখন গাছ পরিচর্য়ার কাজ করছেন। আশা করা হচ্ছে পুরো ফাল্গুন মাস জুড়েই গাছে মুকুল আসবে। এদিকে জেলায় বোরো চাষের লক্ষমাত্রা রয়েছে ৫২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৪৮ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রার ৯২ শতাংশ। আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত রোপণ চলবে। গত বছর ৫১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছিল। বোরোর জন্য এই বৃষ্টি সেচের কাজ করবে। এখন মাঠে রয়েছে কাটার অপেক্ষায় থাকা গম (ফাগুনের শেষ থেকে উঠতে শুরু করবে গম,চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩৬ হ্াজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আগের বছর গম চাষ হয়েছিল ২৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টরে), মসুর.বুট,ধনিয়া জাতীয় ফসল। সরিষা বেশিরভাগ উঠে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, প্রস্ফুটিত আমের মুকুল ছাড়া ধানসহ অন্য কোন মাঠ ফসলের ক্ষেত্রে এত সামাণ্য বৃষ্টি তেমন ক্ষতি করবে না। বরং কিছু হলেও উপকার হবে। তবে এখন পর্যন্ত যে সব আম গাছের ফলন আগাম বা যেসব আম গাছে আগাম মুকুল এসেছে বা যে সকল চাষী যথাসময়ে সঠিকভাবে গছের পরিচর্য়া করেছেন (বাগান ব্যবস্থাপনা) শুধু তাদের গাছেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ৩৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে।নাচোল অঞ্চলে বেশ কিছু গাছে বিশেষ করে ছোট গাছে মুকুল এসেছে। তবে বয়স্ক গাছে এবার মুকুল কম আসতে পারে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে যথেষ্ট মুকুল আসার আশা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়া যত গরম হবে মুকুল তত দ্রæত ফুটবে। আবহাওয়া গরমের সাথে মুকুল ফোটার সম্পর্ক রয়েছে।
উপ-পরিচালক আরও বলেন, এবার আমের অফ ইয়ার (ধারাবাহিকভাবে এক বছর আমের ফলন ভাল হয় ও পরের বছর একটু কম হয়। বেশি হওয়া বছরকে অন ও কম হওয়া বছরকে অফ ইয়ার ধরা হয়)। তাই ফলন কিছু কম হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আম নষ্ট হবে কম। কৃষকরা মূল্য বেশী পাবে।
সদর উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের আমচাষী বিষু মিয়া(৬০) বলেন,বৃষ্টিতে উপকার হবে। গাছ ধুয়ে পরিস্কার হয়েছে। বৃষ্টির পর রোদ উঠে আকাশ পরিস্কার হয়েছে। আবহাওয়া সুন্দর হয়েছে। আম গাছের পরিচর্যা এখন চলমান। সদর উপজেলার রামকৃষ্টপুর গ্রামের অপর আমচাষী,বাগানী ও পেশাদার পরিচর্য়াকারী মন্টু মিয়া(৬৫) একই ধরণের মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,শেষ সময়ে মুকুল আসার পরিচর্যা এখন জোরেসোরে চলছে।