এই সভ্যতার নষ্ট সংস্কৃতি ভেঙে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর
মতো নতুন কোনো সভ্যতার অভ্যুদয় ঘটিয়ে
একদিন ফিরে আসবো বলেই, আজ আমি স্বেচ্ছায় নির্বাসন চাই।
তোমরা জেনে রেখো,
যারা স্বচ্ছ সাদা চোখে কালো কাপড় বেঁধে
বোধের
দেয়ালে ছিটিয়ে দেয় আলকাতরা!
সততা ও সম্প্রীতির কীবোর্ডে বুড়ো আঙুল
চেপে ধরে
মায়া-মমতা-ভালোবাসার স্বর্গীয় গ্লাসে কৌশলে
ঢেলে দেয় অনাদর ও অবহেলার হেমলক!
আজ আমি তাদের জন্য স্বেচ্ছায় নির্বাসন চাই।
একদিন আমার সাদা কাফনে মোড়ানো
লাশের
শরীর থেকে অশরীরী আবছায়া হয়ে ফিরে
আসবো বলে!
নিজ ভিটেমাটিতে, পায়ের তলায় খসে পড়া
চামড়ার ভাঁজে গজিয়ে উঠা শেকড় বাকরের
লেজুড়বৃত্তিক আশ্রিত হাইব্রিডদের নাক গলানো,
ভ্রু-কোচকানো অযৌক্তিক সংলাপ প্রতিনিয়ত
আমার মৃতপ্রায় মস্তিষ্ক কুরে কুরে খায়!
তাদের বেশরম ও উলঙ্গ চোখের পর্দায়
অসহায়ত্বের
নিরব আর্তনাদ কেবলই তাচ্ছিল্য ও উপহাসের
খোরাক!
চাটুকারদের সরগরমে ক্ষমতা ও দম্ভের মিথ্যে
মোহে যারা ক্ষুধার হিংস্র দাঁত কেলিয়ে উচ্চস্বরে
জানান দেয় নিজেদের দুর্ধর্ষ অবস্থান!
আমি আজ তাদের জন্যই মরে গিয়ে এক জলন্ত
আগুনের ফুলকি হয়ে ফিরে আসার তাগিদে
স্বেচ্ছায় নির্বাসন চাই।
তোমরা বিশ্বাস রেখো,
ঘূর্ণিঝড়, ভুমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, মিসাইল কিংবা
কোনো অন্ধকার মহাজাগতিক শক্তি রূপে হঠাৎ
একদিন আমার আবির্ভাব ঘটবে....
ভন্ড, লোভাতুর, কুচক্রী যত্তসব কেঁচো, সাপ,
গিরগিটি ও বিচ্ছুদের রাজত্বে।
আমার মৃত্যুর পর এই শহরের দেয়ালগুলো
হয়ে
উঠবে একেকটি প্রতিবাদী কাগজ!
সব ব্যর্থতা, অক্ষমতা, গ্লানি ও অনধিকার চর্চার
প্রতিটি শব্দ সেদিন, রায় বাঘিনী হয়ে তিরষ্কারের
থুথু ফেলবে নির্দয় কূপমণ্ডূকদের মুখে।
আজ থেকে শতসহস্র বছর পর হলেও আমাদের
বংশধরেরা যারা থাকবে,
তাদের স্ফটিকের চোখে আমার রেখে যাওয়া
অসমাপ্ত লেখাগুলো নতুন কোনো ইতিহাস হবে,
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আহমদ ছফা,
তারেক মাসুদ,
মার্টিন লুথার কিং অথবা মহাশ্বেতা দেবীর মতো
কারো না কারো লিখনিতে।
আমি চলে গেলেও,
আমার প্রচ্ছায়া একদিন নিশ্চিত বিপ্লবী হয়ে উঠবে
ঘর থেকে রাজপথে।
নেলসন ম্যান্ডেলা, মাওলানা ভাসানী, বাঘা যতীন
কিংবা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো আবার কেউ
মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে এই ভূখণ্ডে,
নতুন রুপে নতুন পরিচয়ে।
আর তোমরা যারা আমাকে খুব করে কাছে টানো
এই আমি, ধ্রুপদী নক্ষত্রের মতো হাসিমুখে
মিটিমিটি জ্বলবো তোমাদের অসীম আকাশে
অযুত-নিযুত কোটি বছর ধরে....