নিউজ ডেস্ক: ঝড়বৃষ্টির কারণে সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ নেই। অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা আগেই ঘুমিয়ে পড়ে গ্রামের সবাই। রাত দুইটার দিকে কান্নার শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস লিজার। ডেকে তোলেন স্বামী ইমরান শেখকেও। মুঠোফোনের আলো নিয়ে বেরিয়ে ওই দম্পতি খেয়াল করেন, বাগানের অন্য প্রান্ত থেকে আসছে কান্নার শব্দ। প্রতিবেশীদের ডেকে তোলার পর কাছে গিয়ে দেখতে পান ফুটফুটে এক কন্যাশিশু।
ঘটনাটি বাগেরহাট সদর উপজেলায় চিতলী বৈটপুর এলাকার। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে গতকাল রোববার দিনগত রাতে তিনটার দিকে বাগেরহাট মডেল থানার পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে। শিশুটি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
লিজার স্বামী ইমরান শেখ বলেন, রাতে তাঁর স্ত্রী ডেকে তুললে প্রথমে তিনি বিশ্বাস করেননি। বরং তাঁকে ধমক দেন। কিছুক্ষণ পর আবারও ডাকা হয়। তখন স্ত্রীর কান্না কান্না অবস্থা দেখে অন্ধকারের মধ্যে বের হন ইমরান। পরে দেখেন, সত্যিই একটা বাচ্চা কাঁদছে। ইমরান বলেন, ‘প্রতিবেশীদের ডেকে তুলে কাছে গিয়ে দেখি, দোকানের ক্যারম বোর্ডের ওপর ফুটফুটে একটি বাচ্চা। দেখলে যে কারও মায়া লাগবে। আমার স্ত্রী বাচ্চাটাকে তুলে নেয়। পরে আমরা পুলিশের কাছে দিয়ে দিই।’
সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে কেন কারা এভাবে ফেলে গেলেন, মা-বাবা কারা, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বাগেরহাট সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবু সাঈদ বলেন, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে তার স্বজনেরা গতকাল গভীর রাতে গোপনে চিতলী বৈটপুর গ্রামের চা–দোকানি সাঈদ শেখের দোকানের ক্যারম বোর্ডের ওপর ফেলে যান। ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল শিশুকে ওই দম্পতির কাছ থেকে এনে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়ে কয়েকজন এরই মধ্যে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
এদিকে আজ সোমবার সকালে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ফুটফুটে শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন। আজ দুপুরে শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে যান বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলামসহ অনেকে।
সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, গতকাল (রোববার) শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে বলে তাঁরা মনে করছেন। কন্যাশিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। সে সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, আপাতত নবজাতকটি পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছে। শিশুটিকে দত্তক পেতে একাধিক নিঃসন্তান দম্পতি জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন।