ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি ঃ খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার রূপসা ঘাট এলাকা। ভোরভেরা ঘাটের চিরচেনা সেই প্রাণচাঞ্চল্য তখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। দু-একটা ট্রলারে মানুষ এপাড়-ওপাড় যাতায়াত করছেন। তবে ঘাটের একটু পাশেই দৃশ্যপট অন্য রকম। শত শত মানুষের হাঁকডাক। হাঁকাহাঁকির পাশাপাশি মাপজোখ, দরদামে সবাই মহাব্যস্ত। শ্রমিকেরা মাথায় মাছের ড্রাম নিয়ে ছুটছেন পাইকারের ঘরের দিকে। সেখানে বড়, মাঝারি, ছোট; সাগরের, জঙ্গলের, পুকুরের, বিলের-সব ধরনের মাছই আছে। পাইকারি দরে বিক্রি হওয়া মাছ চলে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন বাজারে। আবার বরফের চাঁইয়ের নিচে চাপা পড়ে বাক্সবন্দী হয়ে চলে যাচ্ছে শহরের বাইরে, অন্য জেলায়, অন্য শহরে।রূপসা ঘাটের পাশে অবস্থিত এই মাছ বাজারের নাম রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়ত। বলা হয়ে থাকে, এটি খুলনা বিভাগ তো বটেই, পদ্মার এপারের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের আড়ত। ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় সরগরম হয়ে ওঠে এই বাজার। সকাল নয়টার মধ্যে বেচাবিক্রি সব শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় আবার বাজার বসে বেলা একটায়। চলে তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। সকালবেলায় মূলত সাগরের মাছ, সুন্দরবনের নদীর মাছ আর আশপাশের উপজেলার দেশি প্রজাতির বিলের মাছ বেশি বিক্রি হয়। দুপুরের পাওয়া যায় মূলত লোনাপানির ঘেরের মাছ। চুয়াল্লিশ কেজিতে মণ হিসাবে সাদা মাছ বিক্রি হয়। মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বছরে ঈদের ২ দিন বাদে ৩৬৩ দিন এই বাজার চলে। এখানকার ক্রেতা মূলত খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা, যাঁরা মাছ নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। অল্প মানুষ পরিবারের জন্যও মাছ কিনতে আসেন। তবে এ বছর বাজারে মাছ অনেক কম। জঙ্গলে, ঘেরে মাছ কম হচ্ছে। আবার যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেকেই মাছ আর এই আড়তে আনেন না।বাজারে সাগরের ইলিশ, জাভা, ভেটকি, কলম্বো, মেদ, টুনা, রূপচাঁদা, বেলে, মোচন, চিংড়ি, ফোঁপা, লইট্টা, ভোলা; নদীর দাঁতনে, পারশে, ট্যাংরা, কাঁকড়া, চিংড়ি; স্বাদু পানির রুই, কাতলা, মৃগেল, পাবদার যেমন দেখা মিলল; তেমনি বিলের কই, শোল, টাকি, পুঁটিসহ নানা ছোট মাছের দেখাও পাওয়া গেল।খুলনা শহরের ৩৬টি মাছ বাজারের মাছ এই আড়ত থেকেই যা। মাছের যাতে সংকট না হয়, সে জন্য চট্টগ্রাম থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হয়।আড়তের এক অংশের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী হাওলাদারের হিসাবে, আড়তে এখনো প্রতিদিন কেনাবেচা কোটি টাকার ওপরে। শহরের ৩৬টি মাছ বাজারের মাছ এখান থেকেই যায়। আড়তে যাতে মাছের সংকট না হয়, সে জন্য চট্টগ্রাম থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হচ্ছে।