প্রতিনিধি,টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি ও টাঙ্গাইল—২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই ও জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার বাদী মির্জা আফরোজ এশার (২২) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওই নারীর বন্ধু সৌরভ পালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে পাঁচ দিনের রিমা—আবেদন করে সৌরভকে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। ভিকটিম এশার বড় বোন লুনা মির্জা বাদী হয়ে তাদেরই বড় ভাই মির্জা জিয়াউর হাসান জনি ও এশা’র বন্ধু সৌরভ পালের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করার পর রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে সৌরভকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার সৌরভ পাল টাঙ্গাইল শহরের থানাপাড়ার শ্যামল পালের ছেলে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান,শনিবার রাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে এশা মির্জার বোন লুনা মির্জা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এশা মির্জার ভাই মির্জা জিয়াউর হাসান জনি ও সৌরভ পাল নামে একজনকে আসামি করা হয়েছে। রাতেই লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
এরআগে শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকালে টাঙ্গাইল শহরের বোয়ালী এলাকার তিনতলা বাসার নিজ কক্ষে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এশা মির্জার লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে ঢাকা থেকে ক্রাইমসিন দল আসার পর লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও ওই নারীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঘুমানোর কথা বলে ওই নারী নিজের কক্ষের দরজা বন্ধ করে। কক্ষে ঢোকার আগে নিজের পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকে এক আত্মীয়ের কাছে রেখে যায়। কিছুক্ষণ পর শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে ওই আত্মীয় দরজায় ধাক্কা দেন। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাননি। খবর পেয়ে বিকাল চারটার দিকে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে এশার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। প্রকাশ, চলতি বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় এশা মির্জা বাদি হয়ে টাঙ্গাইল—২(গোপালপুর—ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বড়ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনি ও তার স্ত্রী নিগার আফতাবের নামে ধর্ষর্ণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এশা মির্জা ধর্ষর্ণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেন। পরে ৬ এপ্রিল দুপুরেআদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।মামলা দায়ের করার পর গোলাম কিবরিয়া বড় মনি উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন পান। পরে নিম্ন আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৩০ জুন টাঙ্গাইল শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন এশা মির্জা। পরে আদালতের নির্দেশে এশা মির্জার গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়— অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনির শিশুটির বায়োলজিক্যাল বাবা নন। আদালত গত ৯ অক্টোবর গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে ১১ জুলাই উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিন বহাল রাখেন। পরে তিনি কারামুক্ত হন। ধর্ষণ মামলাটি টাঙ্গাইলের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিপিআই) তদন্ত করছে। এরমধ্যে শনিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এশা মির্জার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
করে পুলিশ। আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় তার ভাই মির্জা জিয়াউর হাসান জনিকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।