মঙ্গলবার, জানুয়ারী ২১, ২০২৫

ম নি র জা মা ন

  • দাম্পত্য
  • ২০২৩-১১-১৮ ০৯:২৯:২০

বিয়ের পর দুইটি বছর কেটে যাচ্ছে। মা একবারই এসেছিলো; তাও কয়েকঘন্টার জন্য। দোকান থেকে পুরি এনেছিলাম। মিথিলা চা করে দেওয়ায় বলেছিলো—আহা, তুমি কষ্ট করতে গেলে কেনো!
আমি মজা করে বলেছিলাম—যদি এককাপ  চা কইরা না খাওইলো, বউ ক্যামন, বুঝবা ক্যমনে! তোমার বউ ভালো উন্থন বানায়; খাবা নাকি?
মা জানতে চায়—এইটা আবার কি মিথিলা?
চাইনিজ মেনু; বেশি সময় লাগবে না; বানিয়ে দি আন্টি?
আজকে থাক; পরে একদিন খাবোনে।
মা লিফটে নামতে নামতে বলে—কিরে, ‘মা’ না কইয়া তোর বউ আমারে ‘আন্টি’ কইলো!
এই রকমই।
রান্নাবান্না কে করে, তুই?
তয় আবার কি।
গেলাম; বউয়ের মন জোগাইয়া চলিস, বাছা।
মা যাওয়ার পর মিথিলা বলে—তোমার মা’র খুব অহংকার, দেখতেছি!
‘তোমার মা’ বলতেছো কেনো! অন্তত ‘শাশুরি আম্মা’ বলো।
আগে বুইঝা লই—মিথিলা ঠোঁট উলটায়।
মা আবার আমার বাসায় এলো কালকে সন্ধ্যায়। এসেই 'ইস, কি নোংরা থাকিস...' বলে সাফ-সাফাই শুরু করে দিলো। আমিও মা’র সাথে হাত লাগাই। মা ফ্রিজ ঘেটে বলে—কিছুতো নাই। যা বড় দেইখা একটা পাঙ্গাশ মাছ নিয়া আয়। টাকা আছে? এই ল; পান আনিস।
মায়ের তৎপরতায় ছেলেবেলা ফিরে পাই। অনেক বাজার-সদাই  নিয়ে এসে মা-পুতে খুব রান্নাবান্নায় লেগে পড়ি। বাবা ছেলেবেলায় মারা যাওয়ায় মা-ই আমাদের বাবা। জানতে চাই—ঘটনা কি, মা?
বাসায় মন টিকতেছিলো না। তোর এখানে থাকবো ক’দিন।
ভেরি গুড গার্ল; চলো, রাঁধবো, খাবো আর আড্ডা দেবো।
বউ সহ্য করবে?
থোরাই কেয়ার।
মিথিলার সুটিং ছিলো। মা এসেছে, জানাই নি বলে বিরাট শোরগোল জুড়ে দেয়—হ্যাঁ, আমাকেতো পাত্তাই দাও না। হোটেল থেকে ভালো ডিশ নিয়ে আসতে পারতাম। আন্টি, কি খাবেন বলেন…।
রাত-দুপুরে তোমার ব্যস্ত হওয়া লাগবে না, বউ। সকালে আমার জন্য পান নিয়া আইসো। পোলা আমার সব আনছে, খালি পান আনতে ভুইলা গেছে।
মিথিলা আমাকে ধমকায়—এতো ভুলা মন কেনো তোমার…।
আমি আর মা টেবিল সাজিয়ে ফেলি—মাছের ভুঁনা, লেজ-মাথা দিয়ে কদুর ঝোল, কদুর ছোলার ভাজি, কদুর বিচির ভর্তা; পাশে রাখি গুড়ের পায়েশ। মিথিলার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়—ওয়াও আন্টি!
আমি বলি—পায়েশ আমি পাকাইছি, বুঝলা।
কি! তুমি  ডেজার্ট বানাতে জানো, অথচ একদিনও খাওয়াও নাই!
এইতো এখন খাও; আর কি খাবা—মা  জানতে চায়।
ড্রয়িংরুমে বিছানা করে দিলে পান খেতে খেতে মা বলে—বউ টায়ার্ড; যা, তোরা ঘুমাতে যা; আমি টিভি দেখতে দেখতে শুইয়া পড়ুম নে…।
দরজা লক করে মিথিলা জানতে চায়—তোমার মা কেনো আসছে?
কেনো আসছে মানে! ইচ্ছা হইছে আসছে; অসুবিধা আছে?
কয়দিন থাকবে?
ও ম্যাডাম, আমার মায়ের নিজের বাড়ি মিরপুরে; এতো জেরা কইরো না।
মাকে পেয়ে দেখতেছি ভাবচক্কর পাল্টে গেছে!
হ, গেছে। যাবেইতো…।
ভোররাতে প্রশ্রাব চেপে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি, ড্রয়িংরুমের ডিভানে আমার মা ছোট্ট মেয়েটি  হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মা যে দুঃখের একটা ডিব্বা—আমরা তিন ভাইবোন ছাড়া কেউ জানে না। আমি গিয়ে পাশে শুয়ে আলোতো করে জড়িয়ে ধরি। টের পেয়ে মা ঘুরে এসে আমার চুলে আঙ্গুলবিলি কেটে দেয়, আর বহুদিন পর  কাদার মতো ঘুমে ডুবে যাই। মা গায়ে কাঁথা টেনে দেয়। তারপর জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
ভোরের আভাস পেয়ে মিথিলা জেগে উঠে দেখে—আমি মাকে জড়িয়ে ধরে ঘু্মিয়ে আছি। ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মনে মনে বলে—উঁহ, অসহ্য আদিখ্যেতা।
মার ঘুম পাতলা। বউয়ের সকালটা যে ভেস্তে গেছে, বুঝতে পেরে বলে—গুড মর্নিং মিথিলা।
গুড মর্নিং আন্টি—মিথিলা মনে মনে বলে—যত্তোসব! পোলারে কোলে লইয়া ঘুমানোর শখ মিটাইয়া দিতেছি…। মিথিলা এগিয়ে এসে আমাকে জাগাতে গেলে মা বলে ওঠে—শোনো বউ, রান্নাঘরে গিয়া চা বসাও। যাও, সোনা বউ আমার…।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলে সকালটা শৈশব হয়ে যায়। ধোঁয়া-ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলি—মা, তুমি আর যাবা না কইলাম…। 
চা খেয়ে আমি বাথরুমে ঢুকে পড়ি। মা মিথিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে—বউ, যাওতো, দোকান থেকে গরম-গরম নানরুটি আর নিহারি নিয়া আসো।
মিথিলা বলে—আমি? 
হ্যাঁ, যাও, লক্ষ্মি বউ আমার…। দুই হাজার টাকার একটা কচকচে নোট ধরিয়ে দিয়ে বলে—নাস্তা কিনে যা থাকে সব তোমার; যাও; যাবা আর আসবা…।
টাকা দেখে থতমত খেয়ে গিয়ে মিথিলা দরজা খুলে বেরিয়ে যায় বটে; সে দোকানে না গিয়ে রিক্সা নিয়ে ওদের বাসায় চলে যায়। মেয়েকে দেখে ওর মা বলে—এতো সকাল সকাল তুই?
ওই বাসায় আমি আর থাকবো না। তোমার জামাই এখনো মায়ের পুত; আমারে পোছে না…।
বৃত্তান্ত শুনে মিথিলার মা বলে—খাড়া, আমি কালা মুন্সিরে কইয়া চুল পড়া আইনা দিতেছি; পারবি খাওইয়াইতে?
পারতি হবে, মা; পারতিই হবে; নাইলে সংসার গোল্লায় যাবে যে...।
দেরি দেখে বলি—এইটা কি করলা, মা! মিথিলা টিভি-সিরিয়ালের নায়িকা; ওরে পাঠাইছো দোকানে নাস্তা আনতে! অয় কি আইবো!
তয় কি হইছে! কই যাইবো?
বাপের বাড়ি; কাছেইতো অগো বাসা।
মা হাসে—টাকা দিছি না! গেলেও আবার আইয়া পড়বে। তুই তাইলে যা, নাস্তা নিয়া আয়; ম্যালাদিন দোকানের নাস্তা খাই না।
আমি নাস্তা আনতে বেরিয়ে ফোন করি—মিথিলা, চলে আসো; আমি নাস্তা নিয়ে যাচ্ছি; তোমার পছন্দের নিহারি আর রুটি।
তোমরা মা, পুতে মিলে খাও। এইসব আদিখ্যেতা ভাল্লাগে না।
আসো; না এলে মিস করবা; মায়ের টাকাটাতো দিয়া যাও!

 


এ জাতীয় আরো খবর