সোমবার, জানুয়ারী ১৩, ২০২৫

ম নি র জা মা ন

  • চাবির কারবারি
  • ২০২৩-১০-২০ ১৩:৩২:২৫

নৈজ্যা আমাদের ছেলেবেলার বন্ধু। মহল্লায় ওদের টিনের ঘর। বাপ-ভাইরা দোকান করে। অথচ ও একটা পাক্কা চোর। 
আমরা যখন এইট/নাইনে পড়ি ও তখন চুরি বিদ্যায় হাত পাকায়। 
আমরা জানতে চাই, এই কাজ শিখলি ক্যামনে? 
ওস্তাদ আছে। 
কে তোর ওস্তাদ? পরিচয় করায়া দে। 
গোমর ভাঙা নিষেধ। 
চোর হলেও নৈজ্যা বন্ধু প্রিয়। 
আমাদেরকে এটা-ওটা খাওয়ায়। চাইলে ধারও দেয়। 
ওকে নৈজ্যা ডাকি বটে, ভালো নাম নজরুল। নামে নামে মিতা হওয়ায় কবি নজরুলের খুব ভক্ত।  যদি অনুরোধ করি, গড়গড় করে বিদ্রোহী কিংবা সাম্যবাদী শুনিয়ে দেয়। 
কখনো আক্ষেপ করে বলে, চুরির কারবারে না ঢুকলে কবিই হইতাম, বন্ধু। 
আমরা যখন কলেজে পড়ি, নৈজ্যা তখন পাক্কা চোর। মহল্লায় চুরি হলে ওর দিকে আঙুল ওঠে। কিন্তু কেউ ওকে ফাঁসাতে পারে না। একবার কমিশনার অফিসে বিচার বসে। 
কমিশনার চাচা বলে, স্বীকার কর, নৈজ্যা।
নৈজ্যার মা বলে, আমার পোলারে হুদাই ফাঁসাইতাছো, ভাই। হেদিন অয়তো অর মামুর বাড়ি আছিলো...। 
কথায় বলে, চোরের মার বড়ো গলা। রনেভঙ্গ দিয়ে কমিশনার বলে, সাক্ষীর অভাবে এইবার বাইচা গেলি। মনে রাখিস, চোরের দশদিন তো গৃহস্থের একদিন। 
ছেলেকে নিয়ে বাসায় যেতে যেতে মা বলে, তোর বিচার কেডা করবো, কমিশনার! তুই তো বড়ো চোর। 
আমরা জানতে চাই, ক্যামনে চুরি করিস? 
নৈজ্যা পকেট থেকে ভারী একটা চাবির গোছা বের করে ঝনঝন শব্দ তুলে হাসে, একটায় না খুললে আরেকটা...। 
কী মাল চুরি করস তুই? 
সোনা আর নগদ টেকা। বাজে-মালে হাত দিই না। 
নৈজ্যা এখন আমাদের মতো বয়স্ক। ওদের টিনের ঘর দালান হয়ে গেছে। আমি মহল্লা ছেড়ে সেক্টরে ফ্লাট কিনে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকি। 
সকালবেলায় বাজার করতে যাচ্ছি; কে যেন পেছন থেকে ডাক দেয়। তাকিয়ে দেখি, নৈজ্যা! এখনো আগের মতো লিকলিকে। টেডি জিন্স পরা। সরু থুতনীতে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি।
আমি বলি, খবর-টবর কী? 
নৈজ্যা হাসে। 
দাঁত কই? 
ফেন্সিডিলে খায়া ফালাইছে। 
কাজ-কর্ম? 
সব বাদ। বড়ো মাইয়া ভার্সিটিতে পড়ে। 
কবি নজরুলের কথা মনে আছে? 
নৈজ্যা ঠিক আগের ভঙ্গিতে বিদ্রোহী কবিতা শুনিয়ে জানতে চায়, বাসা কই, বন্ধু? 
আমি আঙ্গুল তুলে দেখাই, ওই যে ঐ চার তলায়। 
ঐযে ফুলগাছঅলা বারান্দা; ঐটা? 
চল যাই; তোর ভাবীর সঙ্গে পরিচয় হবি। 
আরেকদিন যামু। অহন বাইর হইছি মহল্লার মসজিদের লাইগা সিমেন্ট কিনত। 
তোর চাবি কই? 
পকেটে হাত দিয়ে ঝনঝন শব্দ শুনিয়ে বলে, চাবি না রাখলে পকেট খালি-খালি লাগে। 
জীবন সর্বক্ষণ কর্মমুখরতায় ঠাঁসা। পূঁজার ছুটিতে পাহাড়ে ঘুরতে যাই জীবনের মধু আহরণে। ফিরে এসে দেখি, দরজার লক ভাঙা! ভেতরে সব ঠিকঠাক; শুধু আলমারি খোলা। 
জীবনটাকে হাস্যকর মনে হয়। 
নৈজ্যাকে ফোন করি। নৈজ্যা বলে, বন্ধু, আমিতো কাজ-কর্ম ছাইড়া দিছি। আমি অহন মসজিদ কমিটির মেম্বার।

 


এ জাতীয় আরো খবর