স্বনামধন্য কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল এর আজ ৪৪-তম প্রয়াণ দিবস
- মুনমুন বণিক
-
২০২৩-০৯-২৬ ১৩:৩২:৩৫
- Print
বাংলাদেশের নৃত্য শিল্পকে যারা বিশেষ একটা পর্যায়ে উঠিয়ে এনে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল। তিনি একজন নৃত্য শিল্পী,অভিজ্ঞ নৃত্য শিক্ষক ও বিশিষ্ট কোরিওগ্রাফার।
বাংলাদেশের কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী গওহর জামিল ১৯২৫ সালের ২৬শে জানুয়ারি বিক্রমপুরের সিরাজদীখান গ্রামে এক হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল গণেশনাথ।
পরবর্তী পর্যায়ে মুসলিম ধর্মীয় বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী রওশনকে বিয়ে করার পর তাঁর নাম হয় গওহর জামিল। স্বামী স্ত্রী দুজনেই বাংলাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী।
গওহর জামিল শৈশব থেকেই নৃত্যকলার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন এবং মারু থাপা পিল্লাই (ভরতনাট্যম), বালকেষ্ট মেনন (কথাকলি), রামনারায়ণ মিত্র (কত্থক) প্রমুখ প্রখ্যাত নৃত্যগুরুর নিকট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নৃত্য শিক্ষা করেন।
উদয়শঙ্কর এবং ভাস্করদেবও গওহর জামিলের নৃত্যগুরু ছিলেন। তিনি কিছুদিন বুলবুল ললিতকলা একাডেমী এবং কামরুন্নেসা বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের নৃত্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৫৯ সালে গওহর জামিল ও রওশন জামিল দুজনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি মানসম্পন্ন নৃত্য কলা শিক্ষার উপযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। যা জাগো আর্ট সেন্টার নামে সকল সাংস্কৃতিক বোদ্ধা মহলে সমাদৃত হয় ।
গওহর জামিল বহু নৃত্যনাট্য রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য নৃত্যনাট্যের মধ্যে রয়েছে ‘সামান্য ক্ষতি’, ‘আনারকলি’, ‘বিচার’, ‘কাঞ্চনমালা’, ‘ইতিহাসের একটি পাতা’, ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ ইত্যাদি।
গওহর জামিলের কয়েকটি জনপ্রিয় খন্ডনৃত্যের মধ্যে রয়েছে ‘ঝুমুর’, ‘কৃষাণ-কৃষাণি’, ‘জেলে’, ‘সাপুড়ে’ এবং ‘নবান্ন’।
তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করে দেশের কালচার ও সংস্কৃতিকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন।
এ উপলক্ষে গওহর জামিল রাশিয়া, চীন, হংকং, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশে নৃত্য পরিবেশন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণকালে তিনি সেখানকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশীয় লোক সঙ্গীত ও নৃত্যকলার বিশেষত্ব নিপুণ ভাবে তুলে ধরে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। তিনি চলচ্চিত্রের নৃত্যপরিচালক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।
গওহর জামিল ১৯৮০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাড় থেকে বাজারে যাওয়ার পথে রোড এক্সিডেন্ট তিনি অকালেই মারা যান।