শনিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৫

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ওয়াহিদুল হক

  • মেসবা খান
  • ২০২৫-০৩-১৬ ১৬:৫৪:১৭

ওয়াহিদুল হক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, লেখক এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক। 
পুরো নাম আবুল ফাতাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। 
জন্ম ১৬ মার্চ ১৯৩৩ সালে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল মনোহারীয়া গ্রামের এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে। পিতা মাজহারুল হক এবং মাতা মেওয়া বেগম। 
পিতা মাজহারুল হক ১৯৪৬ সালে ঢাকার নওয়াব হাবিবুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন।
ওয়াহিদুল হকের কর্ম জীবন শুরু হয় ১৯৫৬ সালে দি 'ডেইলি মর্নিং নিউজ' পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। পরে তিনি পিপল, উইকলি ওয়েব, ডেইলি নিউ নেশন ও ডেইলি স্টার এ সাংবাদিকতা করেন। 
শেষ বয়সে তিনি দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় কলাম লিখতেন। তাঁর জনপ্রিয় কলাম ছিল ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগেও কিছুদিন খন্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে আইয়ুব সরকারের রবীন্দ্র-বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি জনমত গঠন করেন এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সমমনস্কদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন 'ছায়ানট'। 
সারা দেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি ১৯৮০ সালে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। 
প্রমিত বাংলা উচ্চারণ ও বাচনিক উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে তিনি 'কণ্ঠশীলন' নামক আবৃত্তি সংগঠন গড়ে তোলেন। 
এছাড়াও তিনি অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, নালন্দা (বিদ্যালয়), শিশুতীর্থ, আনন্দধ্বনি প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। 
সঙ্গীত ছিল তাঁর ধ্যানের বিষয়। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের গুরু হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ওয়াহিদুল হক ছিলেন সঙ্গীত সংগঠক। ‘সকল কাঁটা ধন্য করে’ নামে তাঁর সারাজীবনে একটি মাত্র রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম ছিল। তিনি গানের ভিতর দিয়ে, 'চেতনা ধারায় এসো' ও 'সংস্কৃতি জাগরণের প্রথম সূর্য' নামক তিনটি সঙ্গীতবিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থও রচনা করেছেন। তিনি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম একজন সংগঠক ছিলেন।
ওয়াহিদুল হক স্কুল জীবন থেকেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 
১৯৭১ এ তিনি ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’ গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 
১৯৭৩ সালে তিনি ন্যাপের হয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
২০০০-২০০১ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুণী বাঙালি হিসেবে যে দু’জনকে পুরস্কৃত করা হয়; ওয়াহিদুল হক ছিলেন তাঁদের একজন। 
২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর মরদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দান করে যান। শ্রদ্ধাঞ্জলি। 
 

 


এ জাতীয় আরো খবর