তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শতবার জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার/আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে/আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে -
অড্রে হেপবার্নের প্রিয় কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’অনন্ত প্রেম’ কবিতাটি। আমাদের রবী ঠাকুর তাঁর প্রিয় কবি। হ্যাঁ, হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রি অড্রে হেপবার্নের কথাই বলছি।
হলিউডের স্বর্ণালি যুগে সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি বলতে যা বোঝায়, কিংবদন্তি ব্রিটিশ অভিনেত্রি অড্রে হেপবার্ন ছিলেন ঠিক তাই।
‘রোমান হলিডে’ কিংবা 'ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানিস' এর মতো সিনেমা দিয়ে হেপবার্ন জায়গা করে নিয়েছিলেন অজস্র সিনেমা অনুরাগীর হৃদয়ে।
হলিউডে হেপবার্ন একজন চলচ্চিত্র ও ফ্যাশন আইকন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
তিনি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট কর্তৃক মার্কিন চলচ্চিত্র ইতিহাসের তৃতীয় সেরা নারী কিংবদন্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান।
আন্তর্জাতিক সেরা পোশাক পরিধানকারী তালিকা 'হল অফ ফেম' এ তেও স্থান পান।
জন্ম বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের ইক্সেলেস জেলায় ১৯২৯ সালের ৪ মে।
হেপবার্নের ছোটবেলা কাটে বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের দখলে থাকা নেদারল্যান্ডের আর্নহেম শহরেও তিনি অবস্থান করেছিলেন।
আমস্টারডামে থাকার সময় তিনি ব্যালে নিয়ে পড়াশোনা করতেন।
১৯৪৮ সালে তিনি লন্ডনে চলে যান ব্যালে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখতে। সমবেত সঙ্গীত দলের একজন হিসেবে ওয়েস্ট এন্ড মিউজিকাল প্রোডাকশনে কাজ করার সুযোগ পান। তিনি ইংরেজি, ফরাসি, ডাচ, ইতালীয়, স্প্যানিশ ও জার্মান ভাষায় দক্ষ ছিলেন।
তাঁর আসল নাম অড্রে ক্যাথেলিন রুস্টন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অবশ্য আইডা ভ্যান হেমস্ট্রা নামের ছদ্মনাম ধারণ করেন। কারণ তাঁর পরিবার মনে করেছিলো, ব্রিটিশ নাম নিয়ে যে কোনো সময়েই তিনি জার্মান নাৎসি বাহিনির রোষের মুখে পড়তে পারেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা হেপবার্নকে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি নিজেকে একজন মানবতাবাদী হিসেবে দাবী করেন।
১৯৫১ সালে ব্রডওয়ে নাটক জিজিতে অভিনয়ের পর হেপবার্ন ১৯৫৩ সালে 'রোমান হলিডে' চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কারণে তিনি প্রথম অভিনেত্রি হিসেবে একইসাথে একাডেমি পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা পুরস্কার অর্জন করেন।
একই বছর তিনি 'অনডিন' নাটকে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রধান অভিনেত্রি হিসেবে 'টনি অ্যাওয়ার্ড' অর্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি বেশ কয়েকটি সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার মধ্যে রয়েছে সাবরিনা, দ্য নান’স স্টোরি, ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফিনি’স, চ্যারেড, মাই ফেয়ার লেডি এবং ওয়েট আনটিল ডার্ক।
ওয়েট আনটিল ডার্ক চলচ্চিত্রের জন্য তিনি দ্বিতীয়বারের মত একাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও বাফটা মনোনয়ন পান।
হেপবার্ন স্বল্পসংখ্যকদের মধ্যে একজন যিনি একাডেমি, এ্যামি, গ্যামি ও টনি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি মূল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ ব্রিটিশ অভিনেত্রি হিসেবে তিনবার বাফটা অ্যাওয়ার্ড অর্জনের রেকর্ড করেন।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি অভিনয় জগত থেকে দূরে সরে যান এবং ইউনিসেফের হয়ে সেবাসূলক কাজ শুরু করেন। যদিও ইউনিসেফের সাথে তিনি ১৯৫৪ সাল থেকেই যুক্ত ছিলেন।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে তিনি আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার প্রতিকূল সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করেছিলেন।
ইউনিসেফের গুডউইল দূত হিসেবে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম পদকে ভূষিত করা হয়।
অ্যাপেন্ডিশিয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৩ সালের ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজের বাসায় হেপবার্ন ঘুমের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যু পর অভিনেতা গ্রেগোরি পিক টিভি ক্যামেরার সামনে আসেন এবং তাঁর পছন্দের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ’অনন্ত প্রেম’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।