সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। যদিও দলটির নেতাদের দাবি, তাদের নেত্রীকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দলটির কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। কেবল অজ্ঞাত স্থান থেকে অনলাইনে দলটির ফেসবুক পেজ থেকে কিছু কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। সেই কর্মসূচি পালনে রাজপথে তাদের নেতাকর্মীদের তৎপরতাও লক্ষ করা যায়নি।
এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন করতেও দেখা যায়নি। ওই দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী জড়ো হলে তাদের ওপর শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এক অর্থে আত্মগোপনে চলে যায় দলটি। নতুন কোনো কর্মসূচিও ঘোষণা দেয়নি আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। তবে, নতুন বছরে দলটি আবারও মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে যাচ্ছে। দেশ-বিদেশে নিজেদের জানান দিতে ইতোমধ্যে লবিস্টও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সম্প্রতি দেশের শীর্ষ সারির একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাতকারে বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। যার কারণে আমরা সতর্কতার সঙ্গে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলাম। এখন পরিস্থিতি পাল্টিয়েছে। মানুষ বুঝতে পারছে যে, দেশকে কীভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের মধ্যে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি দেব। এ সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে, এখন সময়ের ব্যাপার। আমরা জেলা, মহানগর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমাদের নেত্রীও বিভিন্ন দেশে প্রবাসী নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথা বলেছেন।
এদিকে গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি হয় রাজনৈতিক শূন্যতা। ছেদ পড়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। এ কারণে ২০২৪ সালকে বলা যায় আওয়ামী লীগের জন্য অন্ধকারময় বছর। বছরটি পার হয়েছে, এসেছে নতুন বছর। নতুন বছরে দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটি। তারা বলছে, শুভ ও কল্যাণময় সময় প্রতিষ্ঠা করতে তারা নতুন করে নিজেদের আত্মনিয়োগ করবে। পাশাপাশি বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর সমর্থন চাওয়া হবে।
দলটির একাধিক সূত্র বলছে, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে একের পর এক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। আজগুবি দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করা হচ্ছে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের। আওয়ামী লীগের টুঁটি চেপে ধরতে এমন কোনো কাজ নেই, যা করছে না বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গঠন করা হয়েছে গুম কমিশন। আওয়ামী লীগ সরকারের গুম-খুন-দুর্নীতি নিয়ে জনমত তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
দলটির নেতারা বলছেন, নতুন বছরে তারাও সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নতুন আঙ্গিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে চান। এজন্য নেওয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। যেগুলো তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নতুন করে উজ্জীবিত করবে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের হারিয়ে যাওয়া জনসমর্থন নতুন করে ফিরে পেতে সহায়ক হবে।