পাইকগাছা(খুলনা):
দেশে চলমান শান্তি বিনষ্টকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সকলকে একত্রিত হয়ে ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রদলের সোনালী অতীত খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শামছুল আলম পিন্টু। সোমবার (০২ ডিসেম্বর) এ প্রতিনিধিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র পক্ষে সর্বস্তরে শান্তির বার্তা পৌছে দিতে তিনি সকলের প্রতি এ আহ্বান জানান।
বিভাজন সৃষ্টি হয় দেশে এমন কোনো ধরনের অবস্থা যাতে তৈরি না হয় তার জন্য প্রয়োজন ঐক্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যারা হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের একত্রিত হয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
শামছুল আলম পিন্টুর শিক্ষা-রাজনীতি ও কর্মময় জীবন:
১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরই খুলনা এম এম সিটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি এইচএসসি পাশ করেন। মূলত সেখানে পড়াকালীন ছাত্রদলে যোগ দিয়ে তিনি রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। তারপর ১৯৯৭ সালে জাসাস এর পাইকগাছা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৮ সালে পাইকগাছা উপজেলা যুবদলের সহ সভাপতি, ১৯৯৯ সালে খুলন জেলা যুবদল এর যুগ্ম সম্পাদক, ২০২১/২২ সালে খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০২২/২৩ সালে খুলনা জেলা বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। সেই থেকে তিনি সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
রাজনীতির পাশাপাশি অবহেলিত-নীপিড়ীত অসহায় মানুষের পাশে থাকতে ও দুর্নীতি অনিয়মকে রুখে দিতে এক কথায় নেশা হিসেবে জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। সেই সুবাদে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি প্রেস ক্লাব সভাপতি নির্বাচিত হয়ে পর পর ৩ বার সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। তার আগে ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যিক নগরী কপিলমুনি বনিক সমিতির ২ বার কার্যকরী সভাপতি হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে হরিঢালী-কপিলমুনি মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ও আপোষহীন দেশনেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর তাইতো দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্র জীবন থেকে বিএনপিকে সর্বজন প্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে।
যদিও ১৯৮৯-৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেওয়ায় তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের নির্দেশে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এর পর টানা ১৯ মাস ডিটেনশান খাটার পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তার নেতৃত্বে আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সৌভাগ্য হয় তার। আর তার পর সাহসিকতার ফল স্বরূপ খুলনা জেলা বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে সুনামের সহিত তা পালন করেছেন।
তার দাবি, দলে অংশগ্রহণের পর থেকে বিএনপির সকল আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন তিনি। যার ফলে বহুবার কারাভোগ করতে হয়েছে তাকে। ২০১৩/১৪ সালে খুলনা জেলা ও মহানগররীর অন্তত ৫টি মামলায় আসামি করা হয় তাকে। জেলা বিএনপি নেতা এ্যাড. শফিকুল আলম মনার সাথে একই মামলায় কারাভোগ করেছেন তিনি।
সর্বশেষ ২৪ এর আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের লক্ষে ছাত্র-জনতার ১দফায় একাত্মতা প্রকাশ করে সামনে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দায়েরকৃত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আরও কয়েকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, নিজ পিতার মৃত্যুর খবরটি মোবাইলে পেয়েছিলেন তিনি। ওই সময় খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনার সাথে কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের মায়ের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। বিএনপিকে ভালোবেসে, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায় বাবার মৃত্যু শয্যায় পাশে থাকতে পারেননি তিনি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এর ৩ বছর পর মমতাময়ী মায়ের মৃত্যুর খবরও তিনি একইভাবে পেয়েছিলেন। আর সে সময় তিনি খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে বিএনপির সমন্বয় সভায় বক্তব্য রাখছিলেন।
দলের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস আর আদর্শে ভর করে পিতা-মাতার মৃত্যু শয্যায় উপস্থিত থাকতে না পেরে নিজেকে সন্তান হিসেবে ঘোর অপরাধী দাবি করে সকলের কাছে তাদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করে তিনি বলেন, তার পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিএনপির রাজনীতি মিশে আছে। তার মেঝ ভাই প্রথমে সেচ্ছাসেক দল ও পরে বিএনপি নেতা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। ছোট ভাই সুজা সাবেক জেলা যুবদল নেতা। ছোট বোন মর্জিনা সাবেক মহিলা দল খুলনা জেলা সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, এমনকি বড় ছেলে শেখ তামিমও স্থানীয় ছাত্রদল নেতা হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও তারাও কয়েকবার হামলা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার শিকার হয়েছে। তবুও কারো কোন আক্ষেপ নেই তাদের।
বিএনপি নেতা শামছুল আলম পিন্টু বলেন, ১৯৮৯-৯০ এ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২৪ এর আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে সামনে থেকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়ে বহু হয়রানিমূলক মামলায় আসামি হয়েছেন। কারাবরণও করেছেন অগণিতবার। তবুও তিনি দমে যাননি। দলীয় আদর্শে ভর করে সততার সহিত পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনরকম টিকে রয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দু’ বার খুলনা ৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের মনোনয়ন কিনেছিলেন তিনি। যদিও দু’ বারই দলীয়ভাবে জামায়াতকে আসনটি ছাড় দেওয়া হয়। তাতেও কোন প্রকার আক্ষেপ নেই তৃণমূল থেকে উঠে আসা কর্মীবান্ধব এ বিএনপি নেতার। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান বাংলাদেশে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তার আপোষহীন আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিএনপির আদর্শকে বুকে লালন করে জীবনের শেষ দিনটিও অতিবাহিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সর্বশেষ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন গুলোর স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের থেকে শুরু করে সমর্থকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, একেক জন শামছুল আলম পিন্টু একদিনে তৈরী হয়না। শ্রম-মেধা-মনন আর অকল্পনীয় ত্যাগের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব শামছুল আলম পিন্টু। আর তাই সকলের আশা আগামীতে খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি ও সংসদ নির্বাচনে যোগ্যতা অনুযায়ী তাকে মূল্যায়ন করা হবে। আর তাহলেই যোগ্য নেতৃত্বে ভর করে পথ হারাবেনা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।